ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দাবি করে নতুন শিক্ষানীতি দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখলের পর শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষায় নকলের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ছিল বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে ‘‘টকস অব দ্য ডিকেট’’। এবার যোগ হলো নতুন শিক্ষানীতি এবং দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধবিরোধী কারিকুলাম।’
তিনি বলেন, ‘দেশবিরোধী ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী নতুন এই শিক্ষানীতি ও কারিকুলাম বাস্তবায়িত হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। কথায় আছে, কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই বরং সেই জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করলেই হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে নতুন প্রজন্মকে তাঁবেদার বানানো যায়। সর্বজনীন নয়, বরং কোনো একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
নতুন কারিকুলামে বাংলাদেশে উৎকর্ষতর শিক্ষাব্যবস্থার অনুকূল সমাজভূমি কখনোই নির্মাণ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে। এই শিক্ষা সিলেবাস জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
নতুন কারিকুলামের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা চালানো হলেও সেটা কার্যত ব্যর্থ। বর্তমানে আবার নতুন শিক্ষানীতি ও কারিকুলামের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচন করা হয়েছে, ধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রয়াসকে চূড়ান্তভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা চালু করে কিশোর মনকে বিকৃত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, যোগ্য, নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে সরকার বারবার শিক্ষা খাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষ শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কিত।’
রিজভী বলেন, ‘এই কারিকুলাম একমুখী শিক্ষা হওয়ার ফলে বহুমুখী শিক্ষা হারিয়ে যাবে। যে সরকারের আমলে খাতায় না লিখেও পাস করিয়ে দেওয়া হয়, সেই সরকারের নীতিতে শিক্ষার গুণগত মান কখনোই উন্নত হবে না। আবার এই কারিকুলামের কারণে বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রজন্ম তৈরি বাধাগ্রস্ত হবে এবং দেশে বেকারত্বের সৃষ্টি হবে।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই কারিকুলাম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া প্রমুখ।