ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। তাদের পাঠানো অর্থে সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২.১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগের ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন রেমিটেন্সযোদ্ধা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এই সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক। চট্টগ্রাম বিভাগের রেমিটেন্স যোদ্ধারা বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দেন।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কম ঢাকা বিভাগের রেমিটেন্সযোদ্ধা রয়েছেন ১৪ লাখ ৩১ হাজার জন। ইংল্যান্ডে বিপুল সংখ্যক সিলেটের মানুষের বসবাস হলেও তৃতীয় স্থানে থাকা সিলেট বিভাগের প্রবাসীর সংখ্যা ৫ লাখ ৭৩ হাজার জন। বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, দেশের মোট রেমিটেন্সভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে সর্বাধিক রয়েছে চট্টগ্রামে, ৩৫.২ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে ৩০.৫ শতাংশ এবং সিলেটে ১০.১ শতাংশ। রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সংখ্যা হচ্ছে রংপুর বিভাগের, মাত্র ২.৪ শতাংশ।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০ লাখের বেশি প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগেই সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্সযোদ্ধা আছেন। তবে এই বিভাগে রেমিটেন্সযোদ্ধা বেশি থাকলেও বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর পরিবর্তে হুন্ডির ব্যবহার বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো একটি বিপজ্জনক ধারা। বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো গেলে দেশের অর্থনীতির শঙ্কা কেটে যাবে। চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যবসা এবং চাকরি করে অর্জিত আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে থাকেন।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীরা ২১.৯২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। ২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২১.২৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছে ২.১০ বিলিয়ন ডলার। এটি গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসীদের প্রেরিত এই রেমিটেন্স বৈদেশিক বাণিজ্য এবং ঋণ সমন্বয়সহ লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্ত ভিত দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ। শুধু জাতীয় অর্থনীতি নয়, স্থানীয় এবং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার ক্ষেত্রে রেমিটেন্স প্রবাহ বড় ধরনের ভূমিকা রেখে আসছে। বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ ৩৯-এর তথ্য অনুসারে, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে বসবাসকারীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ইউরোপ–আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী উল্টো দেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যান। তারা সেখানে সম্পদ গড়েন, বাড়িঘর কিনেন। বিদেশে গিয়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোই রেমিটেন্স প্রবাহ গতিশীল রেখেছেন।
বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স ২০২২ অনুসারে, মোট ১৫.৩ শতাংশ খানা বা পরিবার প্রবাসী আয় গ্রহণ করেছে।
জরিপে দেখা গেছে, প্রবাসী আয় গ্রহণকারী পরিবারগুলো মূলত পল্লি অঞ্চলকেন্দ্রিক। পল্লি অঞ্চলের ১৬.৬ শতাংশ পরিবার রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় এ হার ৮.৭ শতাংশ এবং পৌরসভা বা অন্যান্য শহরাঞ্চলে তা ১২.৫ শতাংশ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় প্রবাহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত। কারণ প্রবাসী আয় বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, জাতীয় সঞ্চয় ও টাকার হাতবদলের মাত্রা বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রৃবদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।