DMCA.com Protection Status
title=""

‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ কর্মসূচি জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ৭ জানুয়ারি পার হয়েছে। আওয়ামী লীগের টার্গেট ফুলফিল হয়েছে। সঙ্গে ইন্ডিয়া, চীন, রাশিয়ারও। বাংলাদেশের মানুষের কাছে সাত জানুয়ারি কলঙ্কিত দিন হলেও আওয়ামী লীগ, ইন্ডিয়া, চীন এবং রাশিয়ার জন্য ছিল আশীর্বাদের। এখন তাদের পরবর্তী টার্গেট হচ্ছে বাংলাদেশকে চুষে খাওয়া। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পাওনা বুঝে নিতে  মরিয়া। কিন্তু ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে  চীন কিংবা রাশিয়াকে কোন সুযোগ নিতে দেবে না ভারত। কারণ এই ৭ই মার্চ পার করানোর ক্ষেত্রে ভারত যে কূটনৈতিক দক্ষতা দেখিয়েছে তার কাছে চীন রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র সবাই হতভম্ব। চীন এবং রাশিয়াকে নিজের পক্ষে রেখে ভারত প্রথম ধাক্কাটা দিল যুক্তরাষ্ট্রকে। আওয়ামী লীগকে হাতে ধরে নির্বাচনী বৈতরণী পার করে নিয়ে এলো । একেবারে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। জনগণ ভোট দিক বা না দিক কিছুই যায় আসে না। নির্বাচন তো হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার আগে টেলিফোনে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা দখলকারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেন। অভিনন্দনের দৌড়ে পিছিয়ে থাকলো না চীন এবং রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা এখনো অভিনন্দন কিম্বা স্বীকৃতি কিছুই দেয়নি। তারা কি করবে এখনো পর্যন্ত জানা যাচ্ছে না।

৭ তারিখের ডামি নির্বাচনের পর এমপিদের শপথ গ্রহণ হল, মন্ত্রিসভা গঠিত হলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে আগামী ৩০ শে জানুয়ারি। কে কি বলল কিছুই আসে যায় না। ভারত তার পছন্দের সরকার পেয়ে গেছে বাংলাদেশে। এখন শুরু হবে তার পরবর্তী খেলা। সে খেলাটা কেমন হতে পারে তার একটা নমুনা মনে হয় পংকজ শরণ  দিয়ে দিয়েছেন। পঙ্কজ শরণ মানে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সাবেক ভারতীয় হাই কমিশনার এবং বর্তমানে ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ন্যাটস্ট্র্যাট–এর আহ্বায়ক। গত বৃহস্পতিবার মোদি সরকারের থিংক হিসেবে পরিচিত বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে একটা প্রবন্ধ লিখেছেন যা ঢাকায় প্রথম আলো প্রকাশ করেছে। লেখাটা অনেক বড় যা কিনা চর্বিত চর্বন, তাই সেদিকে তেমন একটা আগ্রহ নেই আমার।সেখানে তিনি বিশ্ব মোড়লদের বিশেষ করে চীন রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে  তার একটা গাইডলাইন দিয়েছেন। আগে  গাইডলাইনটা দেখি।

পঙ্কজ সরনের ভাষায়,"বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নীতি হলো—সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নীতি কাজে লাগাচ্ছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক এবং এর বিপরীতে চীনের দিকে গভীরভাবে ঝুঁকে যাওয়ার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এই নীতি অনুযায়ী পাওয়া যায় না। তবে সরকারের নতুন মেয়াদ বাংলাদেশকে এসব সম্পর্ক পুনরায় সাজিয়ে নেওয়ার একটি সুযোগ করে দেবে।এর জন্য দেশটিতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলোই বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। সেখান থেকেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে। আর বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত হওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগটা আসবে এই পশ্চিমাদের হাত ধরেই। উন্নয়নের অংশীদার করার আড়ালে চীন বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাইছে। ভারতকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখার বেইজিংয়ের যে প্রচেষ্টা, তার একটি অংশ করতে চাইছে বাংলাদেশকে। ভারত এমনটা হতে দেবে না। আর বাংলাদেশ যে এভাবে নিজেকে ব্যবহার হতে দেবে, তা যৌক্তিকও নয়।"

এই কথা দিয়ে পঙ্কজ সরণ বুঝিয়ে দিয়েছেন এখন শেখ হাসিনার সরকারের উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে এনে সম্পর্ক গাঢ় করা। নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্রকে কিক মেরে রিংয়ের বাইরে ফেলে দিয়ে যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করেছিল ভারত সেটা এখন পুষিয়ে দিতে চায়। সেটাও ভারতেরই স্বার্থে। কারণ শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের নামে অতিমাত্রায় চীনের দিকে ঝুঁকে পড়তে যাচ্ছে এমন একটা আশঙ্কা কাজ করছে ভারতের মধ্যে। ফলে চীনকে তো ঠেকাতেই হবে। আর চীনকে ঠেকানোর মতো একক ক্ষমতা যে ভারতের নেই সেটা তারা ভালোভাবেই জানে। এই কাজে ভারতের পাশে দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। কথাটা ভারত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে হয়তো বলতে পারছে না। তাই একটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে দায়িত্বটি শেখ হাসিনার কাঁধে এমন ভাবে তুলে দেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যের নামে। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি  পণ্যের ক্রেতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পশ্চিমা বিশ্ব। এখান থেকে বড় অংকের রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি আসে প্রবাসী আয়। তাদের হাত ধরেই উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। তাদের সঙ্গে যদি শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায় তাহলে তার একটা অংশীদার  হতে পারে ভারত। সেই সুযোগটা তারা কাজে লাগাবে চীনের বিরুদ্ধে। রাশিয়া কোন ঝুঁকি নয় ভারতের জন্য। রাশিয়াকে তারা পাবে প্রাকৃতিক সহযোগী হিসেবে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার বিরোধ এখন তুঙ্গে। ফলে চীনকে ঠেকাতে পারলে এ অঞ্চলে ভারতের দাদাগিরি ফলানো সহজ হবে। নির্বাচনের আগে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল সেটা ভারতের জন্য আতঙ্কের। নিরাপত্তার জন্য হুমকি।ভারত সর্বশক্তি দিয়ে চীনকে ঠেকাতে চায় শুধুমাত্র এ কারণেই।

পঙ্কজ শরণ আরো  লিখেছেন,আগামী পাঁচ বছরে দুই দেশেই বর্তমান নেতৃত্ব ক্ষমতায় থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে চলমান উদ্যোগ ও প্রকল্পগুলো শেষ করার একটি ভালো সুযোগ পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে দুই দেশের আরও বড় পরিসরে একসঙ্গে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা বাড়াবে।
পঙ্কজ শরণ ঠিকই ধরেছেন ভারতে আগামী এপ্রিল মে মাসে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদী। আর বাংলাদেশে তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকছেন। দুজনের চাওয়া-পাওয়া কোনটাই অপূর্ণ থাকবে না। তবে ভারতের চাওয়াটা বেশি পূরণ হবে ইতিপূর্বে যেটা হয়ে আসছে। পঙ্কজ শরণ সেটাই চাচ্ছেন। ভারত সরকার তার ইচ্ছেমতো আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যবহার করতে পারবে এটা তাদের বদ্ধমূল ধারণা। আর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনী বৈতরণী পার করে দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে এই সরকার ঋণী হয়ে আছে।  এই পঙ্কজ শরণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে এসে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকুক তার পক্ষে বক্তব্য দিয়ে গিয়েছিলেন। কোন রাগ ঢাক রাখেননি।কিন্তু পঙ্কজ সরন মনে হয় একটি বিষয় ভুলে গেছেন তার মত আরো অনেক ভারতীয় লেখক বুদ্ধিজীবী লীগ সরকারের হয়ে দিয়ে থাকেন।মোদি সরকারের পাশাপাশি এসব লেখক বুদ্ধিজীবীর বক্তব্যের কারণে বাংলাদেশের মানুষের বিরাট অংশে ভারত বিরোধী হয়ে উঠেছে। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পঙ্কজ সরন কোন্ চশমা দিয়ে দেখেছেন জানিনা তবে তার এই লেখাটি যে থিঙ্কট্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে তারই সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্তের একটা বক্তব্য তুলে ধরা যায়। তিনি দৈনিক প্রথম আলোতে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন এই নির্বাচনে দশভাগের বেশি লোক ভোট দিতে যায়নি। অর্থাৎ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এই নির্বাচন বর্জন করার অর্থ হলো শেখ হাসিনার সরকারকেই বর্জন করা ।একই সঙ্গে বলা যায় শেখ হাসিনার সরকারকে বর্জন করার অর্থই হচ্ছে ভারতকে বর্জন করা। ঢাকার রাজপথে এখন যে মিছিল বের হয় সেই মিছিলে কান পেতে শুনুন পংকজ শরণ- কি আওয়াজ ওঠে তাহলে বুঝবেন বাংলাদেশের মানুষকে আপনারা কোন্ পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, দিল্লি না ঢাকা -ঢাকা ঢাকা।" ভারতীয় পণ্য বর্জন করো," ইন্ডিয়া আউট।"

একটি বিতর্কিত কলঙ্কিত ঘৃণিত নির্বাচন সম্পন্ন করে দেওয়ার জন্য শুধু মোদি সরকার নয় ভারত এ দেশের জনগণের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবে। কেবলমাত্র শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠীর ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা একটি ক্ষোভ – এখান থেকেই সৃষ্টি হবে বিক্ষোভ। সেটা থামানো কষ্টকর।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!