DMCA.com Protection Status
title="৭

মিয়ানমারের ভারী অস্ত্র রোহিঙ্গাদের হাতে, ক্যাম্পে আতঙ্ক

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলিতে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ভারী অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী সীমান্তের ওপারে গিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা লুটের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার আগে মিয়ানমারে অপরাধীদের হিসেবে পরিচিত ছিল। ভারী অস্ত্র হাতে তাদের কয়েকজনের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অস্ত্রসহ পালিয়ে আসার সময় ২৩ রোহিঙ্গাকে আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। আরও কিছু রোহিঙ্গার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি একে ৪৭ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, প্রচুর গুলি লুট করেন স্থানীয় অপরাধীরা। পরে দুটি একে-৪৭ রাইফেল বিজিবির কাছে তুলে দেওয়া হলেও বাকি অস্ত্রগুলো অপরাধীর কাছে রয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালংখালী এলাকার কয়েকজন যুবক বলেন, ‘সেদিন আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম। পালংখালীর ইউনিয়নের পুটিবনিয়া এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে হেলাল উদ্দিন এবং স্থানীয় জাহাঙ্গীর দুটি একে ৪৭ রাইফেল নিয়ে যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে তারা দুজন রাইফেল দুটি বিজিবির কাছে জমা দিতে বাধ্য হন। এর বাইরেও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা অপরাধী ও বিজিপি সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র লুট করেছেন অপরাধীরা। দুটি একে-৪৭ রাইফেল জমা দিলেও তাদের কাছে আরও বেশকিছু বিদেশি পিস্তল ও প্রচুর গুলি রয়েছে।’

তারা আরও বলেন, একই দিন পালিয়ে আসা সন্ত্রাসী গ্রুপ থেকে হাজি জালালের ছেলে রুবেল গোলাবারুদ ভর্তি একটি ব্যাগ কেড়ে নিয়ে লোকদেখানো কিছু গুলি জমা দিলেও বেশিরভাগ গুলি নিজের কাছে রেখে দেন। যদি তাদের আইনের আওতায় আনা হয়, তাহলে লুট করা সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর থেকে হেলাল পালংখালী ইউনিয়নের পুঠিবনিয়া ও সফিউল্লাহ কাটা এলাকায় রাজত্ব কায়েম করে রেখেছেন। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নবী হোসেন গ্রুপের সহযোগী হিসেবেও কাজ করছেন। পালিয়ে আসা নবী হোসেন গ্রুপের সদস্যদের নিরাপদে ক্যাম্পে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছেন হেলাল। এছাড়া পালংখালী আনজুমান পাড়া, বটতলী সীমান্তে থাকা অপরাধীরা রাতের আঁধারে মিয়ানমারের ওপারে গিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা লুট করে এপারে নিয়ে আসছেন। তবে লুটকারীরা অস্ত্রধারী হওয়ায় সহজে কেউ মুখ খুলছেন না।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন বলেন, ‘ভয়ংকর পরিস্থিতি থাকায় সীমান্তে কী হচ্ছে তা বলা মুশকিল। ভয়ে সাধারণ মানুষ সেদিকে যায় না। আমার কাছেও অস্ত্র লুটের খবর এসেছে। সেদিন ২৩ জনকে আটক করা হলেও অনেকে বিভিন্নভাবে ক্যাম্পে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু সঠিক তথ্য না পেলে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। যদি অস্ত্র মজুতের তথ্য সঠিক হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত অস্ত্রগুলো জমা নিতে হবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হতে পারে।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে আসার সময় স্থানীয়রা ২৩ জন রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেন। তারা সবাই উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকভুক্ত মিয়ানমারের নাগরিক। এ ঘটনায় শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিজিবির এক সদস্য বাদী হয়ে আটক রোহিঙ্গাদের আসামি করে মামলা দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।’

স্থানীয়রা বলছেন, পালিয়ে আসা এসব ব্যক্তি আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্য। সশস্ত্র এ বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটির প্রধান নবী হোসেন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, সীমান্তের ওপারে যেহেতু গোলাগুলিতে অস্থিরতা চলছে, সেহেতু এপারেও আতঙ্ক থাকবে। যুদ্ধক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গার কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ অস্ত্র বা গুলি জমা রাখেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ওনেয়া হবে। এমনকী কোনো ব্যক্তির কাছে যদি একটি গুলির খোসাও পাওয়া যায় তারপরও ছাড় দেওয়া হবে না।

‘যাদের বিরুদ্ধে বিজিবি মামলা করেছে তারা সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত মিয়ানমারের নাগরিক। তারা কী কারণে এবং কীভাবে মিয়ানমারে গিয়েছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে চাওয়া হয়েছে’, যোগ করেন ওসি শামীম হোসেন।

বিজিবির তথ্য বলছে, অস্ত্রসহ আটকের পর বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। প্রাথমিক তথ্যে আটক রোহিঙ্গারা নবী হোসেন বাহিনীর সদস্য বলে জানা গেছে। তারা সীমান্তের ওপারে বিজিপির হয়ে কাজ করতেন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেকে ইয়াবা, আইস ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধ পরিচালনা করতেন নবী হোসেন। তাই তাকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল বিজিবি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!