ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মধ্যেও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি আনুগত্যে এতটুকু ঘাটতি হয়নি অনেক নেতার। হুমকি-ধমকি কিংবা দল ছেড়ে দেওয়ার নানা চেষ্টার পরও তারা অটল ছিলেন। দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। পরেছেন জয়ের মালাও। উল্টো চিত্র দেখা গেছে ইমরানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা নেতাদের ক্ষেত্রে। পিটিআই ছেড়ে অন্য দলের সঙ্গে জোট করা নেতাদের হয়েছে ভরাডুবি। খবর ডন ও বিবিসির।
পাকিস্তানের বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ইমরানের সঙ্গী নেতারা রাজনৈতিকভাবে প্রতাপশালী প্রার্থীদের হারিয়েও জয়ী হয়েছেন।
ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর পিটিআইকে রাজনীতির মাঠ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেই প্রতিকূল সময়ে দল ছেড়ে দেন অনেকে। কঠিন সময়ে ইমরানকে ত্যাগ করা খ্যাতনামা রাজনীতিকদের মধ্যে পারভেজ খট্টক অন্যতম। তিনি খাইবারপাখতুনখোয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।
নির্বাচনী প্রচারের সময় খট্টক জোর গলায় দাবি করেন, তিনি আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আর পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জয়ের পর তাঁর সঙ্গে জোট করবেন। কিন্তু তাঁর ভরাডুবি হয়েছে।
অন্যদিকে চিনি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর তারিন এক সময় ইমরানের খুব কাছের লোক ছিলেন। পিটিআই ছেড়ে গঠন করেন ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি (আইপিপি)। তবে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তাঁর দলও চরমভাবে পরাজিত হয়।
পরাজয়ের পর প্রশ্ন ওঠে, কেন ভোটাররা খট্টক ও তারিনের মতো হেভিওয়েট রাজনৈতিক প্রার্থীদের ভোট দেননি? এ বিষয়ে পাকিস্তানের সিনিয়র সাংবাদিক লায়েক আলি খান বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়ায় যে দলগুলো ইমরানের সমালোচনা করেছিল, সেগুলোকেই জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে দলছুট খট্টকের অপমানজনক পরাজয় হয়েছে।
অপর সাংবাদিক আকবরের মতে, এ নির্বাচনে এটি স্পষ্ট হয়েছে, জনগণ স্বাধীনভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছে। ফলাফলে প্রমাণিত হয়, এই প্রার্থীরা ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরানের জনপ্রিয়তার জন্যই জয় পেয়েছিলেন, ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির জন্য নয়।
তা ছাড়া ইমরানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে এই রাজনীতিকদের প্রতি জনগণের ক্ষোভ ছিল। ভোটাররা তাদের সেই ক্ষোভের প্রতিফলন ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
এদিকে পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ঘোষিত ফলের স্বীকৃতি না দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা। তারা ভোট কারচুপি ও হস্তক্ষেপের পূর্ণ তদন্ত ছাড়া ফল মেনে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতারও সমালোচনা করেছেন আইনপ্রণেতারা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে– এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় বিশ্বাসযোগ্য পর্যবেক্ষক কাজে লাগিয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অযাচিত বিধিনিষেধ ও হস্তক্ষেপ দেখা গেছে।