ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বেশ কিছুদিন ধরেই যেন বাতাসে টের পাওয়া যাচ্ছে এক ধরনের আরামদায়ক উষ্ণতা। শীতের হিমেল ভাবটা কেটে গেছে, বাতাস আর কাঁপন ধরায় না। বরং দূর থেকে ভেসে আসে মন উদাস করা ফুলের সুবাস। সেই সুবাস প্রাণভরে টেনে নিলে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে মন, কোথায় যেন বাজে আনন্দের বাদ্য। সেই বাদ্য যেন কানে কানে বলে, দখিন দুয়ার খোলো, আমি আসছি। ঋতুরাজ বলে কথা, তার আগমন তো মহাসমারোহে হবেই! হ্যাঁ, অবশেষে দখিন দুয়ারে হাজির হয়েছে বসন্ত। আবার প্রকৃতির উৎসবে যোগ দিতে ভালোবাসাময় দিনটিও হানা দিয়েছে দরজায়। ভালোবাসার মুহূর্ত আর বসন্ত উদযাপন একই সঙ্গে আজ মন থেকে মনে ছড়িয়ে পড়ার দিন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা ও বসন্তের দিন।
ফুলে ফুলে সেজে ওঠার আনন্দময় প্রস্তুতি এখন প্রকৃতিজুড়ে। গাছে গাছে উঁকি দেওয়া কচিপাতা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানিয়ে দিচ্ছে শীতের রিক্ততাকে। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা বন-বনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠছে একটু একটু করে। বসন্তে পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে ঢেলে দেয় তার সবটুকু রঙ, আর সেই রঙ ছুঁয়ে উৎসবে মেতে ওঠে পুরো দেশ। বাসন্তী রঙয়ের শাড়ি পরে ললনারা হেঁটে না গেলে প্রকৃতির বসন্তবরণও যেন পূর্ণতা পায় না। বেশবাসে সদ্য জেগে ওঠা প্রকৃতির ছোঁয়া নিয়ে ফাগুনের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানাতে বেরিয়ে পরার অপেক্ষা এখন কেবল। লাল আর বাসন্তী রঙে প্রকৃৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্ত ও ভালোবাসার উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি।
কয়েক বছর ধরে একই দিনে উদযাপিত হয়ে আসছে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করায় এখন একই দিনেই পড়েছে দুটি উৎসব। যুগলদের বেশ ব্যস্ততায় কাটে দুই উৎসবের এই দিন। মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী ফুলের দোকানে দিনভর বিক্রি হয় গোলাপ, গাঁদাসহ নানা ধরনের রঙিন ফুল। তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে রাজধানীর রাজপথ, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বর, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ পুরো নগরী। বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, বনানী লেক, মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে বর্ণিল, উচ্ছল-উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ভালোবাসা ও ফাল্গুন উদযাপনে।
ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভালোবাসা ও আনন্দের মাস। ভালোবাসা দিবসের আগে সপ্তাহজুড়েই যেন লেগে থাকে নানা উৎসব। আজ চকলেট দিবস, তো কালকে টেডি দিবস! আরও রয়েছে আলিঙ্গন দিবস, চুম্বন দিবস।
তবে বসন্তবরণ উৎসব যেমন ছেলেবুড়ো সবার, তেমনি ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপও কিন্তু প্রকাশ করার দিন আজ। এ ভালোবাসা সন্তানের উপর বাবা-মায়ের, বাবা-মায়ের উপর সন্তানের। ভাই, বোন, বন্ধু- সবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন আজ। সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার দিন জীবনে তাদের গুরুত্বের কথা।