DMCA.com Protection Status
title="৭

আওয়ামীলীগ এর নেত্রীর ছেলে ‘কোটি কোটি’ টাকা নিয়ে উধাও

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নরসিংদীতে বেশি লাভের লোভ দেখিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা নিয়ে এক যুবকের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আনিকুল ইসলাম নামের ওই যুবক এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কয়েক ভুক্তভোগী অভিযোগ দিয়েছেন বলে নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ জানিয়েছেন।

২৩ বছর বয়সী আনিকুল ইসলাম নরসিংদী পৌর শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকার ‘তৌহিদা এন্টারপ্রাইজের’ মালিক। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের মাঈন উদ্দিন ও আরিফা ইয়াসমীন মুন্নির ছেলে। আরিফা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

অভিযোগে বলা হয়, মোবাইলে টাকা লেনদেনকারী কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের টাকা তোলার ক্ষেত্রে এজেন্টদের যে কমিশন দেয়, আনিকুল তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিতেন।

এভাবে কয়েক মাস তার কাছ থেকে প্রচুর লাভ নেয় ছোট ছোট এজেন্টরা। অনেকে তার কাছে অতিরিক্ত টাকাও জমা রাখে। ১৫ দিন ধরে আনিকুল নানা বাহানায় টাকা দিচ্ছিল না। এর মধ্যেই তার এলাকা ছেড়ে উধাও হওয়ার তথ্য আসে।

এর মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন জনপ্রতিনিধিরা। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক থেকে ঘটনাটির ছায়া-তদন্তের জন্য পুলিশকে বলা হয়।


ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ আনিকুলের বিদেশ চলে যাওয়ার অভিযোগ করলেও তার পরিবার দাবি করেছে, তাকে ‘গুম’ করা হয়েছে। এ অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।   

অভিযোগকারী আল আমিন বলেন, “আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আয়-রোজগার না করতে পেরে একটি এমএফএস কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করি। এখান থেকে যে কমিশন পাই তা দিয়েই আমার সংসার চলে। বাড়তি লাভের আশায় আমি নিজের নম্বর থেকে ক্যাশআউট না করে আনিকুলের এজেন্ট থেকে ক্যাশআউট করতাম।

“কোম্পানি ক্যাশআউটের জন্য এজেন্টকে দেয় এক লাখে ৫০০ টাকা। আর আনিকুল দিত তিন থেকে চার হাজার টাকা। এমন লোভে অনেক এজেন্ট তার কাছে টাকা ক্যাশআউটের জন্য যেত।”

আল আমিন বলেন, “অতিরিক্ত লাভের আশায় আনিকুলকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আমার পাশের বাসার ছেলে আনিকুল পুঁজি গায়েব করে পালিয়ে গেছে। অভিযুক্তের মায়ের কাছে টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়। এখন না খেয়ে মরার মত অবস্থা হয়েছে।”

মঙ্গলবার সাত ভুক্তভোগী একত্রিত হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে আল আমিন বলেন, “আমাদের মোট টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৮০ লাখ।”

আলোকবালী ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের ফাইভ জি স্টোরের মালিক সোহান আলী বলেন, “আনিকুলের এজেন্ট নম্বর থেকে প্রতি এক লাখ টাকা ক্যাশআউটের জন্য অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হত। তিন মাস ধরে আমাদেরকে এভাবে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল এবং একই এলাকার ছেলে হিসেবে তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়।

“কিন্তু ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন অজুহাতে কাউকে টাকা না দিয়ে সুযোগ বুঝে কাউকে টাকা পরিশোধ না করে এলাকা থেকে গত সপ্তাহে পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি তার পরিবারকে জানানো হলে উল্টো আমাদের হুমকি দিয়ে বলে যে, আনিকুলকে গুম করেছি।”

সোহান বলেন, “তার পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। ব্যবসার সব টাকা হারিয়ে, না পারছি পরিবারকে বুঝাতে, না পারছি টাকা আদায় করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে।”

একই এলাকার খলিল উল্লাহ স্টোরের মালিক খলিল উল্লাহ বলেন, “এজেন্ট নম্বরের মাধ্যমে ১০-১২ দিন আগে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। আনিকুলের এজেন্ট নম্বরে টাকা পাঠানোর ডকুমেন্টও আছে। আনিকুলের মায়ের আশ্বাসে তার সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেছিলাম।

“এখন টাকা, সম্মান দুটোই শেষ। মানসিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে চরম খারাপ অবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছি। আমরা টাকা ফেরত চাই।"

আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু বলেন, “টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আনিকুলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আনিকুল বা তার পরিবারের দৃশ্যমান কোনো আয়-রোজগার নেই।


“কিন্তু গত দুই মাসে অন্তত দুই কোটি টাকা ব্যয় করে সদর উপজেলার সংগীতা ও বাসাইল এলাকায় দুটি বাড়ি কিনেছেন। এর আগে তার মা-বাবার নামে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।”

আনিকুলের বাবা মাঈন উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার ছেলে কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। আমার ছেলেকেও গত কয়েকদিন ধরে পাচ্ছি না। নিখোঁজের ঘটনায় নরসিংদী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমরা শহরে কোনো বাড়ি কিনে থাকলে, সরকার তা খোঁজ করে বাজেয়াপ্ত করুক।”

নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ বলেন, "ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাতজনের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি; তবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখিয়ে সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন আনিকুল ।

“আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভুক্তভোগীদের কেউ হুমকি দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছায়া তদন্তকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, "আমি তদন্তে প্রায় ৫০ জন ভুক্তভোগীর নাম পেয়েছি, যাদের টাকার পরিমাণ ১০ কোটির বেশি। তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “ভুক্তভোগীরা সবাই আনিকুলের এলাকার হওয়ায় সহজে তাকে বিশ্বাস করে তার এজেন্ট নম্বর থেকে উত্তোলন করতেন। গত ৩-৪ মাস ধরে নিয়মিত টাকা পরিশোধ করে বিশ্বাস অর্জন করে সুযোগ বুঝে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।"

নরসিংদীর জেলা প্রসাশক বদিউল আলম বলেন, "টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে টাকার সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।”

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!