ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে এখন টালমাটাল অবস্থা চলছে। সামরিক বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে, জেলে থাকা ইমরান খানের প্রতি জনতা সমর্থন দেখিয়েছে। ইমরান বা ইমরানের দলকে নির্বাচন করতে দেয়া না হলেও, ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তবে তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। সামরিক বাহিনীর ইন্ধনে বাকি দুই প্রধান দল মুসলিম লীগ এবং পিপলস পার্টি একজোট হয়ে সরকার গঠন করে ইমরানকে ক্ষমতার বাইরে রাখার পরিকল্পনা সাজিয়েছে। পাকিস্তানের নাটকীয় রাজনীতি কোনদিকে মোড় নেয় তা দেখার বিষয়, কিন্তু এ থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
মাসখানেক আগে বাংলাদেশে প্রায় বিনাবাধায় একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। পাকিস্তানের মতোই দেশি-বিদেশি আপত্তি এবং সরকারের প্রতি জনগণের বিপুল ক্ষোভ ছিল। অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে সেনাবাহিনী ও অন্যন্য সশস্ত্র বাহিনীগুলো মোটামুটি সরকারের কব্জায়। মিডিয়াও সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে হরেদরে কাজ করে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং এর শরিকরা নির্বাচন বয়কট করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন সফল না হওয়ায় এটা নিশ্চিত ছিল যে, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেবে না। আগের দুইবারের অভিজ্ঞতা বলে যে, দেশে-বিদেশে সর্বোচ্চ চাপ এবং তীব্র আন্দোলন গড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এ দেশে সম্ভব না।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তফাত মাথায় রেখে বিএনপির এই বর্জনকে পুরোপুরি অযৌক্তিক বলা যায় না, কিন্তু বিএনপির মতো একটা দলের জন্য ব্যাপারটা ব্যার্থতাই। ইমরানের হয়ে যেভাবে জনগণ ভোটের দিন জীবন দিয়ে কেন্দ্রগুলো পাহারা দিয়েছে, কোনোভাবে সেনাবাহিনী ও অন্যন্য শক্তির রক্তচক্ষুকে ভয় পায়নি, বিএনপি জনতাকে সেই সুযোগ দেয়নি।
বিগত দুই নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বিএনপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডু অর ডাই পথে হাঁটার সাহস করেনি। অথচ, ইমরানের মতোই জেলে থাকা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য এবং জনপ্রিয়তা দুই-ই বেশি। উপমহাদেশের অন্যতম এই আইকনিক নারী নেত্রীর ওপর যে জুলুম হয়েছে, এর ফলে যে জনক্ষোভ, তাকে বিএনপি কাজে লাগাতে পারে নাই। আওয়ামী লীগের প্রবল ক্ষমতার কথা মাথায় রেখেও এ কথা বলতেই হয়। পাকিস্তানের জনগণ তা দেখিয়েছে।
এটা ঠিক পাকিস্তানের জনগণ শেষতক হয়তো বিজয় অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু, এ কথা সত্য যে সংগ্রামের দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রায় তারা অনেকদূর এগিয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যেই জাতি গর্বিত, সেই বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের এ অবস্থা দেখে একটু হতাশ হলেও এ থেকে শিক্ষাও নিতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্রবল সাহস এবং স্বপ্ন ছাড়া দানবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতা সম্ভব না।