ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্যের বাজার লুটেরা, মাফিয়া-সিন্ডিকেটের হাতে দেশ বর্গা দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। মাহে রমজানকে সামনে রেখে এখন থেকেই সরকারের সিন্ডিকেট চক্র জনগণের পকেট কাটতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি। উল্টো গত ১০ দিনে রমজান সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, শুল্ক কমানোর পরও ওই ৪টি পণ্যের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমার কথা। কিন্তু না কমে পণ্যগুলোর দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতো। এখন খুচরা বাজারে খোলা চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখনও সেই দরে কিনতে হচ্ছে চিনি।
রিজভী বলেন, গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬১ টাকা, পাম অয়েল ১৩১ টাকা ও সুপার পাম অয়েল ১৩৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন সয়াবিন তেল ১৫৫ টাকা, পাম অয়েল ১৩৪ টাকা ও সুপার পাম অয়েল ১৩৭ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৭৩ এবং খোলা তেল ১৫৮ থেকে ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম অয়েলের লিটার কিনতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। চালের দাম এক আনাও কমেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৮০, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬৫ ও মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, শুল্ক ছাড়ের পর দাম কমার বদলে লাফিয়ে বাড়ছে ছোলার দাম। মাসখানেক আগেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। শনিবার মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর ও কারওয়ান বাজারে ছোলার কেজি বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায়। ছোলার মতো অ্যাংকর ডালের চাহিদাও বেশি থাকে রমজানে। এক-দেড় মাসের ব্যবধানে এ জাতের ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। তবে সারা বছরই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মসুর ডাল। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আমদানি করা বড় দানার মসুর ডাল এখন ১০০ থেকে ১১০ এবং দেশি মসুর ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বছরের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে।
রুহুল কবীর আরও বলেন, গত বছর এই সময়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অর্থাৎ দাম বেড়েছে তিন গুণের বেশি। একই অবস্থা মাংস ও মাছের বাজারেও। কেজি প্রতি ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। অথচ দুই মাস আগে ব্রয়লারের কেজি ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকার মধ্যে ছিল। একই সঙ্গে চড়া দামে আদা ও রসুন দুই পদই বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে।
তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট যে সরাসরি শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রিত; তা বিভিন্ন সময় ইশারা ইঙ্গিতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন। ডামি সরকারের বাজার লুটের কারণে আজ জনগণ সর্বশান্ত। বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ আর অর্থবিত্তের পুকুরে সাঁতার কাটছে সরকারের লোকজন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে বিএনপি সবচেয়ে বড় উগ্রবাদী দল। দেশে উগ্রবাদের জন্ম বিএনপির হাত ধরে। সরকার আত্মশক্তিতে বলীয়ান। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কিছু বলার আর করার কিছু নেই। তিনি আওয়ামী লীগের জড়পদার্থে পরিণত হয়েছেন। যেভাবে চালানো হয় তিনি সেভাবেই চলেন। যে দেশে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের অস্তিত্ব থাকে সে দেশে উগ্রবাদ খুঁজতে যাওয়া মূর্খের স্বর্গে বাস করা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণপীড়ক অত্যাচারী, ন্যায়বিচারশুন্য প্রশাসন, স্বার্থপর-লোভী আওয়ামী লীগ মাত্র তিন মাসেই বেছে বেছে বিএনপির ৩৪ জন নেতাকর্মীকে খুন করেছে। সরকারী মদদে ও অবহেলায় কারাগারে ১৫ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু নিশ্চিত করার পরও ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনারা কাকে উগ্রশক্তি বলেন? ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি, গণতান্ত্রিক বিশ্বে তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই কেন ? গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের আরও পতন হচ্ছে কেন? পৃথিবীর বিশ্বাসযোগ্য মর্যাদাসম্পন্ন সংগঠনগুলির জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? তার বক্তব্য বরাবরই বিরোধের ছায়াকে প্রলম্বিত করে। তিনি দখলদার মাফিয়া টিমের মুখপাত্র।