DMCA.com Protection Status
title="৭

পন্য বর্জনের ফলে বাংলাদেশকে আর ‘বিশ্বাস করতে পারছে না’ ভারত

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রমজান সামনে রেখে বাংলাদেশের বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ছোলা, পেঁয়াজ ও তেলসহ আটটি নিত্য খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ ও শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে প্রতি বছর বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করবে, এ বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছে না ভারত। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র এমনটা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ যে ভারত থেকে এসব পণ্য নিয়মিত আমদানি করবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। চলমান ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের মধ্যে কম দামে আটটি পণ্য আমদানির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি যে কারণে এখনও আশার আলো দেখতে পারেনি ।

নাম না প্রকাশের শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশা করছি রমজান সামনে রেখে ভারত থেকে অন্তত আটটি পণ্য কোটা অনুসারে না আসলেও   চিনি আর পেয়াঁজ আসবে। আপাতত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে চিনিটা নরেন্দ্র মোদি সরকার আমদানি করতে দেবে।

ভারতের সাথে কোটায় আটটি পণ্য আমদানির আলাপ আলোচনায় জড়িত কর্মকর্তা আরো বলেন, আটটা পণ্য আমদানির জন্য আমাদের একটা ভার্সন (পরিকল্পনা) আছে। ওদের মানে ভারতের একটা ভার্সন আছে । বাংলাদেশ সরকার আটটি পণ্য নেবে তার গ্যারান্টি কি প্রতি বছর দিতে পারবে ভারতকে? বাংলাদেশ যখন চাইবে এ অতিরিক্ত খাদ্যশস্য প্রয়োজন, তখন ভারত সরকার স্থানীয় কৃষকদের বলবে বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত উৎপাদন করো। এই ম্যাকানিজমটা কী হবে? দুই পক্ষ এটা নিয়ে খুব ঝামেলায় আছে।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি অত সহজ না। অনেকে ধারণা করেন, ব্যবসায়ীদের পর্ষায়ে না এনে টিসিবির মাধ্যমে এনে দেশের সব জায়গায় সরবরাহ করলে নিত্যপণ্যের দাম কমে যাবে। আমাদের দেশে পেয়াঁজ বা চাল উৎপাদন পর্যাপ্ত। তা হলে আমরা আমদানি কেন করব?

তিনি বলেন, নেপাল আর ভূটানের বিভিন্ন খাদ্যশস্যের উৎপাদন সেই ভাবে হয় না। দুই দেশেই মাটির চেয়ে পাথর আছে বেশি। তাদের জন্য কোটায় ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমাদানি অতীব প্রয়োজনীয়। সেই সব খাদ্যশস্য নেপাল আর ভূটানের জনগণকে খাওয়ানোর জন্য লাগবে। আমাদের দেশে সে সব খাদ্যশস্য মাটি থেকে উৎপাদন হয় ।

সেই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রতিবছর একই পরিমাণে আমদানি করব, ভারত সরকার এ বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছে না। বাংলাদেশ প্রতি বছর ভারত থেকে ৪৫ লাখ টন গম, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল, ২০ লাখ টন চাল, ১৫ লাখ টন চিনি, ১০ হাজার টন রসুন ও ১ লাখ ২৫ হাজার টন আদা সরবরাহের নিশ্চয়তা চেয়েছিল।
এদিকে গত সপ্তাহে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানান, রোজার আগেই ভারত থেকে দেড় লাখ টন চিনি-পেঁয়াজ আমদানির কথা।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা আউটলুককে বলেন, ভারতের সাথে কূটনৈতিক বাণিজ্য আরো বাড়াতে হবে। হঠাৎ করে ভারত থেকে রোজার সময়ে এ খাদ্য আমদানি করতে পারবে না সরকার ।  

তিনি আরো বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের কথা শুনে দেশকে খাদ্যশস্যে পরনির্ভরশীল করে তুলেছে সরকার। নিজের দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।
জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারে বলেছে, রোজার আগে ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধের চুক্তিতে বাকিতে আট নিত্যপণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। আগামী মার্চ পর্যন্ত সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর আমদানি করা যাবে। তবে ভারত সরকার প্রায় সব পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে।

এমনকি ভারত চিনি, পেঁয়াজ, চালের ওপর থেকে রপ্তানি শুল্ক কমাবে না বলে জানিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বেশি দামে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করতে হবে। ভারতের কঠিন শর্তে চলতি অর্থবছরের ৬ মাস ও তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৬ মাসের তুলনায় আমদানি কমেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ টন। এ ছাড়া চাল, পেঁয়াজ, চিনির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। খেজুর, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের আমাদনি শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে খেজুরের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ; যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। অপরিশোধিত প্রতি টন চিনির ওপরে এত দিন আমদানি শুল্ক ছিল তিন হাজার টাকা। সেটি কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ২৪ জানুয়ারী সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশার প্রণয় ভার্মা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, দেশের জরুরি মুহূর্তে আমদানির জন্য ভারত সরকারের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি, চাল, ডালা, আটা ও আদা-রসুনের একটি তালিকা দেন।  উল্লেখ্য, নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারতের কাছে আটটি পণ্যের কোটা সুবিধা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ।

এর আগে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কোটা সুবিধা নিয়ে কয়েকবার চিঠি চালাচালি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করলেও এর তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তবে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আবার কাজ শুরু করেছেন। ভারতীয় হাইকমিশনার সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলেও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ বিষয়টির ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়।

ওই সময় প্রণয় ভার্মা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে জানান, বিষয়টি ভারত সরকারের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। দুই দেশের জন্য ভালো হয় এমন যে কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটি তালিকা প্রদান করবে বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি, আদা-রসুন ইত্যাদি যাতে করে জরুরি মুহূর্তে আমদানি করা সম্ভব হয়।

এটি নিশ্চিতের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ভারত যে কোনো সংকটে বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতে থাকবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!