ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন ধরনের নির্বাচন হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং ফলাফল পূর্বেই প্রস্তুত করা ছিল।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জিএম কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনো কোনো এলাকায় সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় নির্বাচন সাধারণত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হতো।
তিনি বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু উপস্থিতি ছিল কম।’
দ্বিতীয় ধরনের নির্বাচনকে অবাধ প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য পেশিশক্তি ও অর্থ অবাধে ব্যবহার করা হয়েছে।’
তৃতীয় ধরনের নির্বাচন প্রসঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, তার দলের কর্মীরা এমন অভিযোগ করেছেন যে ‘ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং শিটটি আগে থেকেই তৈরি করা হয়েছিল।’
এ সময় ট্রেজারি বেঞ্চের এমপি ও নির্দল এমপিদের হৈচৈ করতে দেখা যায়। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘তা নাও হতে পারে।’
জিএম কাদের বলেন, সব দল যখন নির্বাচনে আসে এবং নির্বিঘ্নে ভোট দেয়, তখন ১৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং হলেও গ্রহণযোগ্য হয়।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব বড় দল নির্বাচনে অংশ নিলে এই মুহূর্তে তারা ৯০-৯৫ শতাংশ ভোট পাবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমঝোতা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কঠিন।’
গত নির্বাচনে ৪২ শতাংশ ভোট পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চিত্র বিবেচনায় ৪২ শতাংশ ভোট পড়লে সব ভোটকেন্দ্রের সামনে আট ঘণ্টা লাইন থাকার কথা। ‘কিন্তু তা হয়নি,’ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের তুমুল হট্টগোলের মধ্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বৈধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটা আইনত বৈধ। কাউকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করে যে এটি ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি এবং নিখুঁতভাবে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আইন ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়। যাদের এসব বিষয় দেখাশোনা করার কথা ছিল, তারা এড়িয়ে গেছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে লঙ্ঘনে সহায়তাও করেছেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ছাড়া জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য সব দল তাদের নিজস্ব নীতিগত আদর্শ নিয়ে টিকে থাকতে পারবে। আমি আশঙ্কা করছি, রাজনীতি এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দেশজুড়ে ছেয়ে গেছে এবং এটি বেশ কিছুদিন ধরে চলছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এটা প্রতিটি সমাজের জন্য অভিশাপ। ক্রমাগত দুর্নীতির কারণে ভোগান্তি বাড়ে। এতে সমাজের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
এ পর্যায়ে বিরোধীদলীয় নেতা স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন তিনি।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে কাদের বলেন, এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য তদন্তকে বিলম্বিত করতে উৎসাহিত করতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে কিছু লোক এসব পণ্য আমদানি করে।
এসব ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার তাদের হাতে জিম্মি ‘কারণ তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।’