ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব সময় লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। সরকারি মদদে গড়ে ওঠা বাজার সিন্ডিকেট সব ধরনের পণ্যের দর বাড়িয়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই বললে চলে। এর ধারাবাহিকতায় এ বছর রোজায় বেড়েছে খেজুরসহ আমদানি করা ফলের দাম। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। ক্ষুব্ধ মন্ত্রী পাল্টা জবাবে বলেন, ‘বরই দিয়ে ইফতার করেন না কেন? আঙুর, আপেল লাগবে কেন? আপেল লাগবে কেন? আর কিছু নাই আমাদের দেশে? পেয়ারা দেন না কেন?’
তার ওই ব্যক্তব্যের পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্ত্রীকে তুলোধুনো করছেন সাধারণ মানুষ।
সংবাদমধ্যামে জানা যাচ্ছে, রমজান সামনে রেখে দেশে টনকে টন বিদেশি ফল আমদানি করা হচ্ছে। দামের ক্ষেত্রে বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। গরীব মানুষ খেতে না পারলে এসব ফল কি কেবল এমপি-মন্ত্রীরা খাবেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের জোটসঙ্গী সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
এক অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রীর প্রতি বিষোদগার করে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘আমি বরই দিয়ে ইফতার করব আর তুই খেজুর আর আঙুর খাবি। সাহস থাকে তো কর। খেজুর আর আঙুর আমদানি নিষিদ্ধ কর। খেজুর-আঙুর আমদানি করবা আর গরীব মানুষ বরই খাবে। তা হবে না, তা হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষ জর্জরিত। আপনি মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের মশকরা করা মন্ত্রীকে এখনই পাছায় লাত্থি মেরে বের করে দিন। কত বড় সাহস!’
জানা গেছে, উচ্চ হারে শুল্ক নির্ধারণ করায় এবার খেজুরসহ বিদেশি ফলের দাম দ্বিগুনেরও বেশি। এ বিষয়ে রাজধানীর শ্যামবাজারে একটি পাইকারি ফলের আড়তের ব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক জানান, এ বছর গরীব কেন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে রয়েছে খেজুর। প্রতি কেজি খেজুরের দাম দ্বিগুনেরও বেশি। বাজারের সর্বনিম্ন বরই খেজুরের দামও প্রায় ৫০০ টাকা।
পল্টন এলাকার ফুটপাতে দীর্ঘদিন ধরে খেজুর বিক্রি করেন দিদার। তিনি বুধবার রাতে এ প্রতিবেদককে জানান, পাঁচ কেজির যে প্যাকেট মাসখানেক আগেও ১৩০০ টাকায় কিনে আনতাম, তা এবার এনেছি ২৯০০ টাকায়। এবার বোঝেন দাম কেমন বেড়েছে। তিনি বলেন, এ সময় থেকেই মানুষ রমজানের জন্য খেজুর কেনা শুরু করেন, কিন্তু এ বছর তা অনেক কমেছে।
এদিকে দাম বেড়েছে মাছ-মাংস থেকে শুরু করে শাক-সবজিরও। চাল-ডাল-ডিমের দামও চড়া। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ যেন চোখে সরষে ফুল দেখছেন।
এ ছাড়া ভর্তুকি কমানোর অজুহাত দেখিয়ে গ্যাস-পানির দামও বাড়াতে চাইছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, এ সময়ে মানুষের পাশে থাকতে হবে সরকারকে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিম্ম আয়ের মানুষের মধ্যে টিসিবির ট্রাকে ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল ও তেল বিক্রির কথা বলা হলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। রমজানের আগে যেখানে প্রতি বছর ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিন টিসিবির ট্রাকে মালামাল বিক্রি হতো, সেখানে এখন মাঝে মাঝে তার দেখা মিলছে। একটি সূত্র বলছে, সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় এ বছর সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।