DMCA.com Protection Status
title="৭

ভুট্টোর বিচার প্রক্রিয়া ছিল ভুল: ফাঁসির ৪৫ বছর পর পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের রায়

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। তাকে ফাঁসি দেয়ার ৪৫ বছর পর অবশেষে সেটি স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ১২ বছর আগে দায়ের করা প্রেসিডেন্টের রেফারেন্সের জবাবে প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিচার ‘স্বচ্ছ ও সঠিক আইনি পদ্ধতি’ মেনে হয়নি। এর মধ্য দিয়ে কার্যত বিচার প্রক্রিয়ার ‘ভুল স্বীকার’ করেছে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি আঙ্গুল উঠছে দেশটির সেনাবাহিনীর দিকে। এ নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে।
পাকিস্তান পিপল্‌স পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা ভুট্টোকে ১৯৭৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডির একটি কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট তাকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত করে। সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল মুহম্মদ জিয়া-উল হক ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করেছিল। এর দুই বছর পর তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ১৯৮৮ সালের আগস্টে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত দেশ শাসন করেছিলেন জিয়া-উল হক।

বুধবার শীর্ষ আদালতের সর্বসম্মত রায়ের মধ্য দিয়ে আসিফ আলী জারদারির দায়ের করা রেফারেন্সের বছরব্যাপী শুনানি শেষ হয়।

তিনি ২০১১ সালে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভুট্টোর ‘যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠু বিচার মেনে চলা হয়েছিল’ কিনা সে সম্পর্কে আদালতের ‘মতামত’ জানতে চেয়েছিলেন। জারদারি হলেন, দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী।  বেনজিরকে ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে হত্যা করা হয়। ভুট্টোর পুত্র বিলাওয়াল  বর্তমানে পাক শাসকজোটের অন্যতম নেতা।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ আইন বিশেষজ্ঞ ভুট্টোর ফাঁসিকে সামরিক শাসনের নির্দেশে করা একটি বিচারিক হত্যা বলে নিন্দা করেছেন। রায়ে বিচারপতি ঈসা বলেন, দেশের বিচারিক ইতিহাসে অতীতে এমন কিছু মামলা রয়েছে যা জনসাধারণের ধারণা তৈরি করেছিল যে, ভয় বা অনুগ্রহ বিচার বিভাগের কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তাই অবশ্যই আত্ম-দায়বদ্ধতার চেতনায় নম্রতার সঙ্গে আমাদের অতীতের ভুল এবং ত্রুটির মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসতে হবে।  ন্যায়বিচার অটুট, সততা এবং আইনের প্রতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পরিবেশন করা হবে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।’

রায় ঘোষণার সময় ভুট্টোর নাতি বিলাওয়াল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন- আমাদের পরিবার এই শব্দগুলো শোনার জন্য ৩ প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীই যদি ন্যায়বিচার না পান, তাহলে বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখবে কি করে। পিপিপি নেতা এবং পাকিস্তানি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য তাজ হায়দার-ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেছেন- শীর্ষ আদালত অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশাবাদী যে, এই সিদ্ধান্তের প্রতিফলন নিম্ন আদালতেও দেখা যাবে। জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ তুলেছিল ভুট্টোর পরিবার। ৪৫ বছর পর সেই দাবিকেই মান্যতা দিলো পাক সুপ্রিম কোর্ট।
সূত্র: আল-জাজিরা

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!