ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় নির্বাচনকে পুরোপুরি বিনষ্ট করে ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচন মানেই যেন যে কোন উপায়েই জয় বাগিয়ে নেয়া। ৭ই জানুয়ারির ডামি প্রার্থীর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার জবরদখল ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে আনন্দে ভাসছেন শেখ হাসিনা। ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন নাকি ৭৫ পরবর্তী সময়ের সবচে’ ভাল নির্বাচন! এমন কথা শেখ হাসিনাই বলছেন বার বার।
জাতীয় নির্বাচন না হয় শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা-না থাকার বিষয়। ক্ষমতার বাইরে নিজেকে ভাবতে অপ্রস্তুত শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যা খুশি করছেন। কিন্তু উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন সর্বত্রই নির্বাচনে আওয়ামী ব্যধি ছড়িয়ে পড়ছে। আর সে ব্যধি হচ্ছে ‘জয় আমার চাইই চাই’। আওয়ামী লীগের লোকজন কেন জানি হারতে ভয় পায়, তাই জয় নিশ্চিতে এমন কোন কৌশল নেই যা নিতে তারা কুন্ঠাবোধ করে।
এর সবশেষ নজির স্থাপিত হলো দেশের আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে। ৬ ও ৭ই মার্চ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হলেও ভোট গণনা নিয়ে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এ সংগঠনটিতে। এ পরিস্থিতিতে ভোট গণনা করা হয়নি, ব্যালটবক্স সিলগালা করে নেয়া হয়েছে পুলিশের হেফাজতে। বৃহষ্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে, রাতেই ভোট গণনা করা হবে কি না, এ নিয়ে কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
ভোট গণনা না করেই সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় নাহিদ সুলতানা (যুথী)কে। নাহিদ সুলতানা তাকে বিজয়ী করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নাহিদ সুলতানা যুথি আওয়ামী লীগের প্যানেল অর্থাৎ সাদা প্যানেল থেকে নির্বাচন করেননি। এই প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক। তারপরও যুথিকে নির্বাচিত করতে এত কৌশল কেন নিতে হলো আওয়ামী লীগকে? সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের ভাষ্য এটা হলো ডামি প্রার্থীর নির্বাচন। যুথি আওয়ামী প্যানেলের মনোনয়ন পাননি, কিন্তু যুথি কে তা সবাই জানে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক যদি করতেই হয়, তাকে আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকেই তো মনোনয়ন দেয়া যেত। তাহলে তাকে কেন মনোনয়ন দেয়া হলো না?
আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ এখানে একটা ভুল চাল চেলেছে। ডামি প্রার্থী দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় শেখ হাসিনা এসেছেন। অনেক আসনে নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়েছে ট্রাক আর ঈগল মার্কার প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতারা, কিন্তু তা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে কোন বাধা তৈরি করেনি। কিন্তু আইনজীবী সমিতির নির্বাচনটা আসলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মর্যাদার লড়াই। এখানে কারো জন্যই আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ডামি প্রার্থী’ তত্বকে মেনে নেবেন না। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী নেতারা তাদের প্যানেল অর্থাৎ সাদা প্যানেলকে জয়ী করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।
সুপ্রিমকোর্টে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর সবকিছুকে গত দুই বছরের ‘নাটকের ধারাবাহিকতা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন উপ কমিটির প্রধান সম্পাদক পদে ফলাফল ঘোষণা করেছেন। ব্যালট বাক্স বহিরাগতরা সমিতির বাইরে নিয়ে গেছে। এখন হয়তো আবারও নাম ঘোষণা হতে পারে। এ সবই নিজেদের মত নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করার নাটক মাত্র।
তবে হাল ছাড়েননি আওয়ামী লীগ প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ভোট গণনা করতে সক্ষম হয়নি। শনিবার ভোট গণনা হতে পারে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মাত্র কয়েক দিন আগে হয় দেশের সবচে’ বড় আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। সে নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে ২১টিতেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের।
আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সাদা প্যানেলের নিরঙ্কুশ বিজয়কে ভোট কারচুপির নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি–সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। এই প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ওমর ফারুক ফারুকী অভিযোগ করেছিলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশনে নীল প্যানেলের সদস্যদের মারধর করা হয়েছে। ভোটারদের ভয় দেখিয়ে সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
নির্বাচন নয়, জয় চান শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ঠরা। সে জন্য আওয়ামী লীগকে বিসর্জন দিতেও তারা দ্বিতীয়বার ভাবেন না। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আইনজীবীরা বিশেষ করে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা, আওয়ামী লীগকে ধারণ করেছেন, তারা ডামিপ্রার্থী মেনে নেননি। তাই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ডামিপ্রার্থী তত্ত্ব একটা বড় হোঁচট খেলো বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।