ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সেশনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়। নিয়ম অনুযায়ী রাতে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তবে সারা রাত আইনজীবীদের মধ্যে দফায় দফায় হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। পরে ভোট গণনা না করেই সম্পাদক পদে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান। আর ব্যালট রয়েছে পুলিশ হেফাজতে।
ভোট গণনার বিষয়ে কথা বলতে দফায় দফায় ফোন করলেও পাওয়া যায়নি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানকে। তবে কমিটির সদস্য ইকবাল করিম বলেন, ‘আমরা এখনো ভোট গণনা করিনি।’
সম্পাদক পদে একজনকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো ফেসবুকের কথা। ব্যালট এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। রাতে বহিরাগতরা মিলনায়তনে প্রবেশ করে ঝামেলা করেছে।’
আওয়ামী সমর্থক প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের পর ভোট গণনার জন্য সবাই অপেক্ষায় ছিলাম। এরই মধ্যে আমাদের কাছে খবর আসে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করেছে। তখন আমরা বললাম, যে পরিবেশ তাতে ভোট গণনা করা সম্ভব না। ওই সময় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আইনজীবীদের মেরে একজনকে ঘোষণা দিতে বলেছে। পরে চাপের মুখে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।’
ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই দিন ভোট গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ব্যালট বাক্স খোলা হয়। ওই ব্যালট গণনার জন্য বাছাইও করা হয় কয়েক ঘণ্টা ধরে। ওই সময় বিএনপি-সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও স্বতন্ত্র সম্পাদক পদপ্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অর্ধশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তবে উপস্থিত ছিলেন না সভাপতি পদ প্রার্থী এম কে রহমান, আবু সাঈদ সাগর, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক।
বাছাইতে দেখা যায়, সদস্য পদে ভোট গ্রহণের চেয়ে কিছু ব্যালট বেশি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও নাহিদ সুলতানা যুথী। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ১৫০টি ব্যালট বেশি থাকার কথা বলা হয়। পরে তাঁরা ভোট গণনা করতে তাগাদা দেন পরিচালনা কমিটিকে। একপর্যায়ে শুরু হয় গণনা। সে সময় সহসভাপতি প্রার্থী দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু ও রমজান আলী শিকদার এবং সহসম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লবসহ কয়েকজন ভোট গণনা করতে নিষেধ করেন।
তাঁরা বলেন, যেহেতু সব প্রার্থী এবং তাঁদের এজেন্ট উপস্থিত নেই, তাই এখনই গণনা করা যাবে না। কিছুক্ষণ পর অন্যান্য প্রার্থী বারের মিলনায়তনে আসেন। এ সময় সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক দিনের আলোতে ভোট গণনা করতে অনুরোধ করেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান আবুল খায়ের সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ছবি: ভিডিও থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান আবুল খায়ের সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ছবি: ভিডিও থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আলোচনা করে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ব্যালট গণনা শুরু করা হবে বলে জানান। ওই অবস্থায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নাহিদ সুলতানা যুথী ও রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ তাঁদের সমর্থকেরা ব্যালট গণনার দাবিতে অনড় থাকেন। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আইনজীবীদের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ ডাকা হয়। পুলিশ আসার পর অন্য প্রার্থীরা মিলনায়তন থেকে বের হয়ে যান।
পরে যুথীর সমর্থকেরা চাপ দিলে একপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান আবুল খায়ের সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। নাহিদ সুলতানা আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।
সম্পাদক পদে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ব্যালট বুঝিয়ে দিয়ে মিলনায়তন ত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ব্যালট বাক্স হেফাজতে নেয় পুলিশ।
জানতে চাইলে বিএনপি সমর্থক প্যানেলের সম্পাদক পদ প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমরা ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলাম। গণনা শুরুর কিছুক্ষণ পর দেখলাম শাহ মঞ্জুরুল হকদের আপত্তির মুখে গণনা বন্ধ করল। খানিকক্ষণ পর দেখলাম সম্পাদক পদে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করল। পরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও ব্যালট খুঁজে পাইনি।’ ভোট গণনা না করেই একজনকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
সংঘর্ষে আহত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী (সাইফ) বলেন, ‘অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন মাসুদ দরজা খুলে দিলে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা মিলনায়তনে প্রবেশ করে। নাহিদা সুলতানা যুথী আগেই আমার ছবি সন্ত্রাসীদের কাছে দিয়ে রেখেছিল মেরে ফেলার জন্য। তাঁর নির্দেশেই আমার ওপর হামলা হয়েছে।’ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ফোনকল করা হলে রিসিভ করেননি নাহিদা সুলতানা যুথী।