ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জুম মিটিংয়ে দেওয়া বক্তব্যকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে বিকৃত ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করে দেশে-বিদেশে থাকা বিএনপির শুভানুধ্যায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, এটি এমন একটি লজ্জাজনক এবং ঘৃণ্য চক্রান্তের বিষয়, যা কেবল বাংলাদেশ নয়; সমগ্র বিশ্বের রাজনীতিতে বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্রচারের একটি জঘন্য উদাহরণ হিসেবে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের আনাচে-কানাচে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যোগাযোগের জন্য প্রধানত ব্যবহার করা হয় জুম নামে একটি অ্যাপ। সম্প্রতি সরকারপন্থী কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্ম এবং মিডিয়া আউটলেট থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জুম মিটিংয়ে দেওয়া বক্তব্যকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে বিকৃত ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করে দেশে-বিদেশে থাকা বিএনপির শুভানুধ্যায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আবার সেই চাঁদাবাজির ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু তারেক রহমান নন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিয়েও একই ধরনের ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। বিএনপি তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় ফেসবুক এবং ইউটিউবে থাকা এমন ডিপ ফেইক ভিডিওগুলো শনাক্ত করে সেগুলো অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এহেন রীতিবিরুদ্ধ অশালীন ও অপকর্মের হোতারা হয়তো এসব ভিডিও দিয়ে মেসেজ আদান-প্রদানকারী অ্যাপ মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা ভাইবার ব্যবহার করে আবারও এমন তৎপরতা চালাতে পারে। মিথ্যা অপপ্রচার আর অনাচারের সৃষ্টি ডামি সরকারের সারাক্ষণের সঙ্গী।
বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ দেশ-বিদেশের সকল মানুষকে অবহিত করে তিনি বলেন, আপনারা এ সকল ডিপ ফেইক ভিডিও থেকে সতর্ক থাকবেন। বিএনপির কোনো নেতা কখনও এভাবে ভিডিও কল করে কারো কাছে টাকা চাইবেন না, এই বিশ্বাসটা আপনাদের নিজেদের মধ্যে রাখবেন। কেউ যদি এভাবে ভিডিও কলে আপনাদের কাছে টাকা চায় তাহলে সাথে সাথে সেটা দলীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করুন, যাতে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার অ্যাঙ্কর ও লোগো ব্যবহার করে বেশ কিছু ডিপ ফেইক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হয়েছিল। একইসঙ্গে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অফিশিয়াল বক্তব্য প্রদানের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বিকৃত ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদক বেঞ্জামিন পার্কিন ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে দেখানো হয়েছিল, কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারপন্থী একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে এমন ভিডিও তৈরি করছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগের হয়ে বিরোধী দলকে হেয় করার জন্য ‘নাহিদ রেইন’ নামে একজন প্রতারক ও জেল খাটা দাগী অপরাধী এহেন অপতৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই দাগী অপরাধীকে অনলাইনে-অফলাইনে প্রকাশ্যে প্রমোট করছে ভিনদেশের প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। নাহিদ রেইন-এর টুইটার হ্যান্ডেলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করলেই এই দুঃখজনক অপকর্মের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ ময় তিনি ডিপফেক ভিডিও তৈরি করে বিএনপি নেতৃবৃন্দের নামে চাঁদাবাজির অপরাধে অবিলম্বে ‘নাহিদ রেইন’কে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাহিদা রফিক, তাহসিনা রশদী লুনা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।