ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সোমালিয়ার উপকূল থেকে ছিনতাই করা জাহাজের আটক ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে ভারতে নেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক এই জলদস্যুদের দেশটিতে আনার পর তাদের বিচার করা হবে। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন ভারতের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা।
আটককৃত সোমালি জলদস্যুদেরসহ মাল্টার পতাকাবাহী ওই জাহাজটি আগামী শনিবার ভারতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা বলেছেন, জলদস্যুদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হবে। গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ভারতীয় ওই নৌ কর্মকর্তা।
তবে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ আনা হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে, গত শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডোরা সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মাল্টার পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি রুয়েনকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে কমান্ডোরা। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর সোকোত্রা থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে উত্তর আরব সাগরে মাল্টার ওই জাহাজটি ছিনতাই করেছিল সোমালি জলদস্যুরা।
২০১৭ সালের পর সোমালি জলদস্যুদের হাতে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল এটি। রয়টার্স বলছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল ২০১১ সালে। ওই সময় সোমালি জলদস্যুদের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার তাদের কাছে গিয়েছিল মুক্তিপণ হিসেবে।
জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের ঘটনা সর্বোচ্চে পৌঁছানোর সেই সময় ভারতের নৌবাহিনী বড় ধরনের হামলায় জড়িত জলদস্যুদের বিচার ও কারাগারে বন্দি করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনী আটককৃত জলদস্যুদের সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এমভি রুয়েন ছিনতাইয়ে জড়িত জলদস্যুদের বিচারের মাধ্যমে কয়েক বছর পর প্রথমবারের মতো আবারও জলদস্যুদের বিচার করবে ভারত।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এডেন উপসাগর ও উত্তর আরব সাগরে কমপক্ষে এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত। লোহিত সাগরের পূর্বে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে সহায়তা করছে ভারতের মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজ। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ওই শিপিং রুটের নিরাপত্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের নৌবাহিনী কাজ করছে।
ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এমভি রুয়েন ছিনতাইয়ের ঘটনার পর থেকে ভারতের নৌবাহিনী তাদের বিমান ও অন্যান্য জাহাজ থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে অঞ্চলটিকে ‘‘নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি কার্যক্রমের’’ আওতায় রেখেছে।
সামুদ্রিক নিরাপত্তা সরবরাহকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান অ্যামব্রে বলেছে, গত ১৪ মার্চ এমভি রুয়েনকে সোমালি উপকূলে দেখা গিয়েছিল। ভারতের নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা বলেছেন, জলদস্যুরা রুয়েনকে একটি মূল জাহাজে রূপান্তরিত করেছিল। এই জাহাজের মাধ্যমে নৌকা ব্যবহার করে অন্যান্য জাহাজে আক্রমণ শুরু করেছিল তারা। শনিবার ভারতের নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ১৫ মার্চ এমভি রুয়েনকে উদ্ধার ও জলদস্যুদের আটক করেছে।
আরেকটি বণিক জাহাজ, এমভি আবদুল্লাহ গত সপ্তাহে সোমালিয়া থেকে হাইজ্যাক করা হয়েছিল, এবং সোমালি বাহিনী বিদেশী নৌবাহিনীর সাথে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল।
এর আগে, গত ১২ মার্চ দুপুরের দিকে এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। একই সঙ্গে জাহাজের ২৩ নাবিককে আটকে রাখা হয়। দুই দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটিকে বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে নোঙর করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষের সঙ্গে সোমালিয়ার জলদস্যুদের যোগাযোগ শুরু হয়েছে। তবে জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এখনও কোনও মুক্তিপণ দাবি করা হয়নি।