ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশের মানুষের মাঝে প্রশ্ন আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম তা রক্ষা করতে পারছি কি-না? লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিন স্বাধীনতা হুমকির মুখে কি-না? স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রতিবেশী দেশ আমাদের দুইটি লাশ উপহার দিয়েছে।’
৫৪তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি জাতিসংঘ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০ কোটি হলে ৪৩ শতাংশে দাড়ায় ৯ কোটি। যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ৭ কোটি। যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি মানুষ বাংলাদেশে ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। দেশের ৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে এটাই কি আমাদের অর্জন যে ৯ কোটি মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে?’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আজকে সরকার আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনায়। কিন্তু আজকে যারা ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে তারা কি উন্নয়নের কথা বিশ্বাস করবে। আজকে দেশের শিক্ষিত তরুণরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থান নেই। তাই তারা চলে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন হলে তরুণরা দেশ ছেড়ে চলে যেত না। উন্নয়ন হয়েছে ডামি সরকারের কিছু লোকজনের। বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেক তরুণ সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে। প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান কিংবা অন্য দেশের তরুণরা সাগরে ডুবে মারা গেছে এমন সংবাদ পড়েছেন আপনারা কেউ? এই সংবাদ এসেছে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।’
তিনি বলেন, ডামি সরকার দেশকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে দেশের প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করেছে। দেশের মানুষ ভালো নেই। ব্যাংকে সাধারণ মানুষ তাদের অর্জিত সম্পদ গচ্ছিত রাখে। আজকে ব্যাংকগুলো রেড জোনে চলে গেছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকারের লোকজন মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে।
হলফনামার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ডামি নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা যে হলফনামা দিয়েছিল, বিভিন্ন প্রার্থীদের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০১২৪ সালের হলফনামার পর্যালোচনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দেশের মানুষ অবাক হয়ে দেখেছে প্রার্থীদের সম্পদ শত শত গুণ বেড়েছে। মানুষের যে কষ্ট, যুবকদের যে কর্মসংস্থান নেই, মানুষ ঋণ করে চলছে, পরের দিন কি খাবে জানে না। মানুষ পানি দিয়ে ইফতার করছে। সরকারের লোকজনের লুটপাটের জন্য মানুষ কষ্টে আছে।
যুক্তরাজ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই যুক্তরাজ্য সাক্ষী। দেশের মানুষের লুটপাটের টাকা যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসেছে। মাফিয়া সরকারের একজনের সম্পদের হিসাব বেরিয়ে এসেছে। কত বড় মাফিয়া হলে কারো শত শত বাড়ি থাকতে পারে। হয়তো একটা দুইটা থাকতে পারে।
বিচার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিচার বিভাগের দিকে তাকালে দেখি গত শনিবার দেশের প্রধান বিচারপতি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। আরও কিছু বিচারপতি গিয়েছেন। তাদেরকে বিমানবন্দরে রিসিভ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমন অবস্থা হলে সেই দেশের বিচার বিভাগ থেকে মানুষ কতোটা ন্যায়বিচার পেতে পারে তা সহজেই বোঝা যায়। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, অর্থনীতি, ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
নতুন কারিকুলামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম নিয়ে অভিভাবকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে, শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কারণ এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে আগামী যে প্রজন্ম গড়ে উঠবে তারা মেরুদণ্ডহীন হবে। মানে মেরুদণ্ডহীন প্রজন্ম তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের হোস্টেল পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে। বুয়েটের আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতিদিনই খবর আসছে ছাত্রীরা কীভাবে নির্যাতিন হচ্ছে। সব কিছু ধ্বংসের মূল কারণ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া। বাকি থাকলো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। কিছু মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করছে আমরা কি সত্যি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পেরেছি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিবেশী দেশ আমাদেরকে দুইটি লাশ উপহার দিয়েছে। লাশ ফেরত দিয়েছে কি-না আমরা তা জানি না। দুইটি মৃত্যু উপহার দিয়েছে। যারা আজকে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তাদের জনগণের প্রতি কোনো আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই। তার প্রমাণ ১৪, ১৮ ও ২৪ সাল। জনগণের প্রতি আস্থা থাকলে তারা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিত না। মানুষের প্রতি আস্থা থাকতো তাহলে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিত না। প্রহসনের নির্বাচনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগের মহাসচিব ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের লোকজন প্রতিবেশী একটি দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেছে, সেই দেশ না হলে তারা ক্ষমতায় আসতো না। সাহায্য না পেলে ক্ষমতায় আসতো না। এদেরই এক মন্ত্রী প্রতিবেশী দেশ থেকে ফিরে এসে বলেছে যে কোনো মূল্যে তাদেরকে ক্ষমতায় রাখতে। এতে প্রমাণ হয় সরকারের জনগণের প্রতি আস্থা নেই বলে তারা আরেকজনের কাছে সাহায্য চায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সকল সময় বিশ্বাস করে দলের শক্তি দেশের জনগণ। আমাদের এই কথা জনগণ বিশ্বাস করে। জনগণ যে বিশ্বাস করে তার প্রমাণ প্রহসনের নির্বাচনের সময় পাওয়া গেছে। আমরা মানুষের কাছে লিফলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। লিফলেটে দেশের অবস্থা উল্লেখ করে মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম তারা যেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সেদিন বিএনপিসহ সকল বিরোধী দলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ ভোট দিতে যাননি। একটি বড় রাজনৈতিক দলের বড় শক্তি মানুষের আস্থা, অর্জন ও বিশ্বাস। সকল বিরোধী দল আস্থা অর্জন করেছিল বলে মানুষ ভোট দিতে যাননি। আওয়ামী লীগকে বয়কট করেছে। মানুষ পাশে আছে এই পরিতৃপ্তি নিয়ে থাকলে চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিবেশী দেশের কৃতদাসে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যাদের দালালি করছে। আজকে দেশের সম্মানিত মানুষ সম্মান পাচ্ছে না। প্রতিটি সেক্টরের সম্মানিত মানুষ তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে না। আজকে আমরা যে সংগ্রাম করছি এটা একটি রাজনৈতিক দলের সংগ্রাম নয়। এটি বাংলাদেশ ও মানুষের অস্তিত্বের বিষয় নয়। আজকে বাংলাদেশের যে চিত্র তা রক্ষা করতে হলে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের একত্রিত হয়ে দাঁড়াতে হবে। আজকে দেশে যে যুদ্ধ তা সকল মানুষের।’