ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় জিয়া হলে (টাউন হল) প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলার বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের ম্যুরালের ভবনটি এমনিতেই ভেঙে ফেলা হতো। ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত ভবন ঘোষণা করে এটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪ এপ্রিল ভবনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগের দিন ম্যুরালটি ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। শামীম ওসমান দাবি করেন, ‘বিএনপি ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত জানতে পেরে ইস্যু সৃষ্টি করে তাঁরা নিজেরা ম্যুরাল ভেঙে আমার ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।’
আজ শুক্রবার বাদ জুমা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙতে চাইলে আমরা বহু আগেই ভাঙতে পারতাম। দিনের বেলাতেই ভাঙতাম। সুতরাং রাতের বেলা ভাঙার প্রশ্নই আসে না। ওরা (বিএনপি) এটা করে একটা ইস্যু তৈরি করতে চায়, যেন এ কাজটা (৬ দফা মঞ্চ) না হয়। ওরা চায় না, এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হোক। আমি তাদের বলতে চাই, আপনারা তা পারবেন না।’
জিয়া হলের (টাউন হল) ভবনের ছাদে দুটি সিমেন্টের পিলারের ওপর জিয়ার ম্যুরাল লাগানো ছিল। গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সেই সিমেন্টের পিলারের রড কেটে ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে দায়ী করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমরা বলেছি এখানে একটি মঞ্চ হবে। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সব ইতিহাস দেয়ালের টেরাকোটায় ধারণ করা হবে। এ থেকে নতুন প্রজন্ম ৬ দফা, ১১ দফাসহ মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু জানতে পারবে। এখানে বিএনপিরও গর্ববোধ করা উচিত। কারণ, তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন।’
চাষাঢ়ায় জিয়া হল (টাউন হল) প্রাঙ্গণে থাকা জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে
চাষাঢ়ায় জিয়া হল (টাউন হল) প্রাঙ্গণে থাকা জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো
শামীম ওসমান বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং তাঁর কার্যকালকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এমনকি তাঁর রাষ্ট্রপতি পদসহ সবকিছু অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এটি সুপ্রিম কোর্টের রায়। এখানে তাঁর (জিয়াউর রহমান) তো ম্যুরাল থাকারই কথা না। কেউ যদি ম্যুরাল লাগাতে চান, তাঁরা বাড়ির পানির ট্যাংকের ওপর লাগাতে পারেন। তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। এখন ওই ভবন ভেঙে ফেলার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্তব্য স্মৃতি রক্ষা করা। এখানে কেউ বাধা দিলে আমরা তাদের প্রতিরোধ করব। এ ধরনের অশান্তির রাজনীতি করার চেষ্টা যাঁরা করেন, তাঁদের বলতে চাই, অন্য এলাকায় গিয়ে এসব কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। এমন কিছু করবেন না যেন নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে ওঠে।’
৬ দফা মঞ্চ তৈরির প্রসঙ্গ টেনে শামীম ওসমান বলেন, ‘এ কাজটা হলে নারায়ণগঞ্জে একটা খোলামেলা জায়গা হবে। বাচ্চারা এখন শহীদ মিনারের চিপায় বসে থাকে, তারা তখন এখানে বসতে পারবে। ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। আমার দুই নেতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী দ্রুত কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। আশা করি আগামী ১৫ আগস্ট এ মঞ্চ আমরা উদ্বোধন করব। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতা-কর্মীদের নিয়েই এটা উদ্বোধন করব।’
সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের এসব দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও টাউন হল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের টাউন হল ভবনটি পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে সময় ভবনটি নিলামে ভাঙার জন্য গণপূর্ত বিভাগ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু কী কারণে সে সময় ভবনটি ভাঙা হয়নি, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য নথিতে নেই। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ফায়ার সার্ভিস নারায়ণগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি ভবনের তালিকা প্রস্তুত করে। সে তালিকায় টাউন হল ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৪ এপ্রিল টাউন হল কমিটির সভায় ওই পরিত্যক্ত ভবন ভাঙার জন্য নিলাম ডাকের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙার কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি জানান।