DMCA.com Protection Status
title=""

খালেদা জিয়ার ঈদ কাটছে ফিরোজায় স্বজনদের নিয়ে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ ঈদের আনন্দ উদযাপন করেছিলেন ২০০৬ সালে । তাও দেড় যুগ আগে। তখন তিনি ক্ষমতার মসনদে। পরের বছর আসে ওয়ান-ইলেভেন ঝড়। এলোমেলো হয়ে যায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি। গ্রেপ্তার করা হয় তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। কাছাকাছি সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় দুই পুত্র বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে। বিএনপি নেত্রীকে রাখা হয় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি হারান মমতাময়ী মা তৈয়বা মজুমদারকে। কারাগারেই কাটে তার দুটি ঈদ।

দীর্ঘ এক বছর পর  ২০০৭ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান বাংলাদেশের প্রথম এই নারী প্রধানমন্ত্রী। আর ৩রা সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। এর কিছুদিন পর মুক্তি দেয়া হয় তার ছোট পুত্র আরাফাত রহমান কোকোকে। গ্রেপ্তারের পর দফায় দফায় রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য
পাঠানো হয় বিদেশে। জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান চিকিৎসা নেন লন্ডনে। কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো চিকিৎসা নেন মালয়েশিয়ায়। পরবর্তী ক্ষমতাসীন সরকার তাদের দুজনের বিরুদ্ধে দায়ের করে একের পর এক মামলা। জারি করা হয় পরোয়ানা। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি তারা। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা যান কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো। তার লাশ দেশে  এনে দাফন করা হয়।


এদিকে কারাগার থেকে মুক্তির পর খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনে কাটে চারটি ঈদ। ২০১০ সালে আদালতে রায়ের পর ২০১১ সাল ১৩ই নভেম্বর সেনানিবাসের বাড়ি হারালে উঠেন গুলশান-২ এ ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের বাসায়। কিছুদিন পর সেখান থেকে উঠেন ৭৯ নম্বর রোডের ভাড়াবাড়ি ফিরোজায়। এরপর থেকে ওই বাড়িতেই কাটছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পরিবারবিহীন নিঃসঙ্গ জীবন। এদিকে পরিবারের সদস্যরা কাছে না থাকলেও ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিছুটা হলেও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ পেতেন। ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর পর সেই সুযোগটুকু হারিয়ে ফেলেন তিনি। কারাগার থেকে শর্তযুক্ত ২০২০ সাল ২৫ মার্চ মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া হলেও রোগে কাবু হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য ছাড়া তার এবারের ঈদও কাটবে গুলশানের বাসায়। যদিও রাতে দলের মহাসচিবসহ স্হায়ী কমিটি সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা রয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মানবজমিনকে জানান, ২০০৬ সালের পর দেশের মাটিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি ম্যাডাম। মাঝখানে চোখের চিকিৎসার জন্য ২০১৫ ও ২০১৭ সালে দুদফা লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। তখন পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে দুটি ঈদ উদযাপন করেছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৬শে জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সাল ৮ই ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসনের চারটি ঈদ কেটেছে চার দেয়ালে বন্দি অবস্থায়। এরমধ্যে ১টি ঈদ বিএসএমএমইউ হাসপাতালে, ১টি ঈদ এভার কেয়ার হাসপাতালে। আর বাকি ৬টি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা বাসায় পালন করেছেন। এখন তিনি অসুস্থ অবস্থায় শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে বাসায় থাকছেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র, দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনি লন্ডনে থাকলেও ভিডিও কনফারেন্সে তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন ম্যাডাম।
তিনি আরও বলেন, এবার ঈদের দিন সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঈদের দিন রাতে চেয়ারপারসনের বাসায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন দলের সিনিয়র নেতারা।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ২০২২  সালের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। গত বছরের ৯ই আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাড়ে ৫ মাস চিকিৎসা নেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার যকৃতের ধমনিতে অস্ত্রোপচার করানো হয়। এরপর শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে তাকে বাসায় আনা হয়। রমজানে ফের তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুদফা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!