DMCA.com Protection Status
title=""

ঈদ আনন্দ নেই কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের পরিবারে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রাজপথে দৃশ্যত সরকার বিরোধী কর্মসূচি না থাকলেও থেমে নেই বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার। অনেকে আবার জামিন চেয়ে আত্মসমর্পণ করলে তাদের পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। এ ছাড়া ২৮শে অক্টোবরকে ঘিরে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েক সহস্রাধিক বিএনপি নেতাকর্মী এখনো কারাগারে। পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। এসব বিএনপি নেতাকর্মীর এবারো ঈদ কাটছে পরিবার ছাড়া। ঈদের খুশি নেই তাদের পরিবারে। এসব নেতার স্বজনরা জানিয়েছেন, কাছের মানুষদের কারাগারে রেখে মনে ঈদের আনন্দ আসে না।
বিএনপি’র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রায় ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করা হয়। ৭ই জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অধিকাংশই মুক্তি পেয়েছেন। তাছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুরোনো মামলার সাজার রায় হয়। প্রায় একশ’ মামলায় দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সাজা দেন আদালত।

এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও রয়েছেন।
এদিকে অন্দোলন ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীর একটি অংশ জামিন চেয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আবার আন্দোলনকালীন অনেক নেতাকর্মীর নামে পুরোনো মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে হাজিরা দিতে গিয়ে তাদের বেশির ভাগকেই পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীর মধ্যে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএ খোকন, উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। সম্প্রতি হাজিরা দিতে গেলে কারাগারে পাঠানো হয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ ৫১ জনকে, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়া, চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে আলম সিদ্দিকী নয়ন, সাভার উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিনসহ অনেকে।
কয়েক বছর ধরে কারাগারে আছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফুজ্জামান বাবর, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী জিয়াউদ্দিন বাসিত, ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতা জামাল হোসেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীর, প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সহকারী মনির হোসেনসহ অনেকে।
খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা জানান, গত বছরের ২৬শে অক্টোবর একটি হত্যা মামলায় তার স্বামী খোকনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। একই মামলায় এ পর্যন্ত অনেক আসামির জামিন হলেও খোকনকে জামিন না দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ খোকন ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে পানি ধরাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না হলে শরীর খারাপ হবে। তিনি অবিলম্বে খোকনের মুক্তি দাবি করেন।
হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল ইলমী সূচনা বলেন, তার পিতা ৪৯০টিরও বেশি মামলার আসামি। গত ৩১শে মার্চ আত্মসর্মপণ করলে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন। এমনিতেই বছরের ছয় মাস জেল কিংবা ছয় মাস পলাতক থাকেন, ফলে কোনো উৎসব-আয়োজনে সন্তান হিসেবে বাবার দেখা মেলে না। এবারের ঈদেও আমাদের মনে কোনো আনন্দ নেই। ইখতিয়ার রহমান কবিরের স্ত্রী জুঁই জানান, তার দুই বছরের ছেলে আয়াছ বাবাকে কাছে পাওয়ার জন্য প্রায় রাতে ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে। ভেবেছিলাম অন্তত ঈদের আগে কবির জামিনে মুক্তি পাবেন। কিন্তু তা হলো না। রাজীব আহসানের মা ফরিদা বেগম জানান, তার ছেলে রাজনীতি করার পর থেকেই তাদের ঈদে আনন্দ নেই। একমাত্র ছেলেকে কাছে না পেলে, তাকে কারাগারে রেখে কোনো মায়ের মনে ঈদ আনন্দ আসে না। শুধু রাজনীতির কারণে আজ তাদের এই কষ্ট সইতে হচ্ছে।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে বন্দি। তার স্বজনরা জানান, অপুর একমাত্র ছেলে আজান জন্মের পর থেকে বাবার সঙ্গে ঈদ করা হয়নি। বয়স এখন ৬ বছর। শিশু ‘আজান’ বাবার ছবির দিকে শুধুই তাকিয়ে থাকে। ৮ বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। ২০১৬ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একটিতে জামিন হলে আরেকটি সামনে আসে। এভাবে তার বন্দিদশা দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন,  নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট তো আছেই। তাছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি’র অসংখ্য নেতাকর্মী নানা সংকটে জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নন সাধারণ মানুষের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। বিশেষ করে মধ্যম ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এবারের ঈদ সবচেয়ে নিরানন্দ ও বেদনাদায়ক।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা গুম-খুন, পঙ্গু ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারে ঈদ উপহার দিচ্ছে বিএনপি। সারা দেশে ইতিমধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব নেতাকর্মীর পরিবারকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ১০ বছর ধরে সহায়তা দিচ্ছেন। সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সেল গঠন করেছে দলটি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!