DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

উপজেলা নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাখ্যানঃ সর্বনিম্ন ভোটের রেকর্ড

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ স্বল্প ভোটারের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন। এতেই বুঝা যায় বিএনপিবিহীন এই নির্বাচন সাধারণ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটের এই হার গত ৫টি উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে সর্বনিম্ন। নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৫ সালের প্রথম উপজেলা নির্বাচনের ভোটের হারের সঠিক তথ্য জানা যায়নি। যদিও ওই নির্বাচনগুলোতে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেছেন, সকালে বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। যদিও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ধান কাটার মৌসুমে এবারই প্রথম ভোট হচ্ছে না। আগে এই মৌসুমেও ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি থাকতো।

মূলত নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের উপরে মানুষের আস্থা নেই। ভোট দিতে পারলেও তা গণনা করা হবে কিনা ভোটারদের মনে এমন সন্দেহ রয়েছে। এজন্য ভোটার উপস্থিতি কমেছে।
এদিকে সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। এই দফায় ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হলেও স্থগিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জেতায় ভোট হয়েছে ১৩৯ উপজেলায়। গতকাল সকাল থেকে অনেক ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের কম উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বগুড়ার গাবতলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি সকাল থেকেই প্রায় ফাঁকা ছিল, বিভিন্ন কক্ষে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মকর্তাদের। ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮৮৭টি ভোটের মধ্যে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭১৪। শতকরা হিসেবে যা ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ময়মনসিংহেও ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হালুয়াঘাট উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৪ শতাংশ, ফুলপুর উপজেলায় ১৮ শতাংশ ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ১৪ শতাংশ এবং জীবননগরে ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৭ শতাংশ।
ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় ডিমলা উপজেলায় এক এজেন্ট কেন্দ্রের মধ্যেই ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘুমিয়ে পড়া ওই এজেন্ট গণমাধ্যমকে বলেছেন, সকাল ৮টায় কেন্দ্রে আসছি। কখনো কখনো দুই তিনজন আবার কখনো কখনো ২০ মিনিটেও কোনো ভোটারের উপস্থিতি নেই। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারছি না। এছাড়া কোথাও রান্নার আয়োজনে সময় কেটেছে আনসার সদস্যদের। গাজীপুরের কালীগঞ্জে দুপুরে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নারী ও পুরুষ আনসার সদস্যদেরকে রান্নার আয়োজন করতে দেখা গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভোটকেন্দ্র ফাঁকা থাকায় পরিদর্শনে এসে বাইরে থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গাবতলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রায় অর্ধশত মানুষের জটলা দেখা গেলেও কেন্দ্রের ভেতর ছিল ফাঁকা। কেন্দ্রের ১০টি ভোটকক্ষে কোনো ভোটার চোখে পড়েনি। অলস সময় পার করছিলেন ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এমন সময় কেন্দ্রে গাড়িবহর নিয়ে পরিদর্শনে আসেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানসহ কর্মকর্তারা। পরে কেন্দ্রের ভেতরে পরিদর্শন না করেই তারা ফিরে যান।
ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কারণ হিসেবে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। ভোট দিলেও তা গণনা করা হবে কিনা ভোটারদের মনে এমন সন্দেহ রয়েছে। এজন্য ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!