ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চট্টগ্রামে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। বিমানটিতে থাকা দুই পাইলটের অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার জোরে তা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। যদিও সেই দুর্ঘটনা ঠেকাতে গিয়ে স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ অসীম জাওয়াদ নামে এক পাইলটের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অপর পাইলট উইং কমান্ডার সোহান হাসান খান।
জানা যায়, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরার পরপরই বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে দুই পাইলট অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানটিকে বিমান বন্দরের নিকটের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওযার চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টায় তার সফলও হন। তবে ততক্ষণে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সকালে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের বিপরীতে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে।
এদিকে, বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বাহিনীর ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে।
দুর্ঘটনার পর বিমানের দুই পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন ও স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। পরে বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
তাদের মধ্যে আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে বিএনএস পতেঙ্গাতে নেওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহত স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের জন্ম ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোপালপুর গ্রামে। তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার নিয়ে কমিশন লাভ করেন।
চাকরিকালীন তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। তিনি পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘Chief of Air Staff’s Trophy for Best in Flying (Indian Air Force)’ অর্জন করেন।
তিনি দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন। এছাড়াও তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
তার বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ১ মাস ২০ দিন। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক ছেলে, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।