ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দুই দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা ঘুরে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। তার সফরে তিস্তা সমস্যার সমাধান, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ভিসা জটিলতা দূরীকরণ, বিদ্যুৎখাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক যোগাযোগের মতো পুরোনো ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে কেবল নতুন বিষয়টি হলো তিস্তা মেগা প্রকল্পে দেশটির বিনিয়োগের আগ্রহ। যদিও প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পে আগে থেকেই চীন বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তায় যে প্রকল্পের কথা সরকার বলছে সেটি বাস্তবায়নে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকা এক প্রকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশটির সমর্থন পেতে যে প্রকল্পগুলি শেখ হাসিনা সরকার চীনকে দিয়েছিলো তার মধ্যে অগ্রাধিকার ছিল তিস্তার ওই বৃহদায়তন প্রকল্পে। দুই পক্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচনের পরে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা। এখন নতুন করে ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়ায় সংকট সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, তিস্তার বাংলাদেশ অংশে নদীটির বিস্তৃত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুজ্জীবনে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। 'তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন' নামে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক আট হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগে ভাগেই বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে চীন। ইতোমধ্যে তারা নিজেদের খরচে প্রকল্পের সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ৫৪টি নদী প্রবেশ করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিস্তা। এটি ভারতের সোলামো লেক থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এটি চিলমারির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফর করেন। এসময় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরো কয়েকটি বিষয়ে চীনের সহায়তা কামনা করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট। সেই সময়ই মূলত তিস্তা ভিত্তিক এ প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করে চীন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে তিস্তা রেস্টোরেশন প্রকল্পে নদীর পাড় বাধানো ও সংস্কার, নদীর বিস্তৃতি একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাপে আনা এবং ভূমি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এর ফলে তিস্তার পারে থাকা শত শত একর জমি বা ভূমি পুনরুদ্ধার হবে যা ভূমিহীন মানুষ কিংবা শিল্পায়নের কাজে লাগানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা প্রকল্পে চীনের অর্থায়নের বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত। এ নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে রুটিন কাজ চলমান। এর মধ্যে নতুন করে ভারতের আগ্রহ প্রকাশের বিষয়টি তারা বিস্মিত।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই গুঞ্জন ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত দিয়েই তার দ্বিপক্ষীয় সফর শুরু করবেন। তবে বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরও বিষয়টি খোলসা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, দিল্লি তো কাছে, বেইজিং একটু দূরে। প্রধানমন্ত্রীর অনেক আগে থেকে ভারত সফরের কথা রয়েছে। ভারতে যেহেতু নির্বাচন, সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কখন সফর হবে, সেটি নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারতে নির্বাচনের পর সরকার গঠন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সফর কখন হবে, সেটা ঠিক হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার বেইজিং সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে ভারতের চলমান লোকসভা নির্বাচন ও জুনের প্রথম সপ্তাহে সরকার গঠন নিয়ে দেশটির ব্যস্ততা থাকবে। তাই চীন সফরের আগে ভারত সফরের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে অনেকে মনে করছেন। সেক্ষেত্রে চীন সফর আগে হলে তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
চীনের বিনিয়োগ প্রস্তুতির মধ্যেই ভারতের বিনিয়োগ ‘প্রস্তাব’ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি করবে কি না কিংবা এক্ষেত্রে সরকার কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবে এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো কূটনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে। বাংলা আউটলুককে তিনি বলেন, এখানে ‘ব্যালেন্স করার কিছু নেই। চীন আগে থেকেই বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। তারা কিছু কাজও করেছে। ভারত এক্ষেত্রে নতুন। গতকালও কেউ জানতো না যে তারা এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। সুতরাং সরকারের এখানে নতুন করে কিছু ভাবার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি আরো বলেন, তিস্তার মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে চীনের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বেশি থাকার কথা। তাছাড়া তারা নির্বাচনের পরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা বলেছিল।