রাকেশ রহমানঃ আমরা দোয়াকরি মতিউর রহমান নিজামীর মাগফেরাতের জন্য। মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর এর পাশাপাশি আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক সফলতা থেকে পিছিয়ে পড়ল যোজন যোজন দূর।
একটি প্রশ্ন খুব জানতে চায় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এই যুদ্ধাপরাধী বিচারটা নিয়ে কেন এত নাটক কেন লুকোচুরি। মতিউর রহমান নিজামী দীর্ঘ পাঁচ বছর মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন সাফল্যের সাথে ।একটা পয়সাও দুর্নীতি করেননী এটা বিরল সততার নিদর্শন আমাদের দেশের জন্য । সততা হচ্ছে এইটাই যে আমি আমার নিজেকে খুব ভালো চিনি কোনটা আমার ভালো কোনটা আমার খারাপ তা আমি ভালই জানি কিন্তু আমার খারাপ দিকগুলো খুব সুন্দর করে অন্যের উপর প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে চাপিয়ে দিয়ে আমার বিরোধী শক্তিকে দমন করার মাধ্যমই হচ্ছে এক ধরনের মৌলবাদ । সত্যি কথা বলতে ভালো মানুষ কখনো জোর করে ভালো হয়ে সম্মান আদায় করে না এটা পরীক্ষিত। মানুষ সম্মানিত হয় তার কর্মের মধ্যে দিয়ে। কর্ম যেমন নির্ধারণ করবে মৃত্যুর পরে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কোথায় যাবে বেহেস্ত না দোযখে একই ভাবে অন্যান্য ধর্মাবলীর মানুষও বিশ্বাস করে যে কর্মের ফলেই পৃথিবীতে হয়তো সেই মানুষ আলোচনা ও স্মরণে থাকবে হাজার বছর। অথচ কর্ম যদি আমাদের সেই জায়গা গুলো করে দিতে না পারে আমরা যতোই চেষ্টা করি না কেন বা যতই বাহু বল প্রয়োগ করি না কেন লাভ হবে না বরং ক্ষতি হবে যা পূরণ করা সম্ভব নয়। রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য নিজের জন্য নয়। এই কথাগুলো যাদের বোধগম্য হতে কষ্ট হয় বা যে সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা শুধু মাত্র নিজের জীবনে রাজনীতির ফসল প্রতিফলন করতে বা করিয়েছেন সেই সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইতিহাসের পাতায় ঘৃণিত এবং সময়ের পরিবর্তনে তারা আলোচিত থেকে সমালোচিত হয়ে রয়েছেন এবং হচ্ছেন। ঠিক একই ভাবে আমাদের দেশ বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল গুলোর ভিতরে যারা বিশেষ করে বার বার ক্ষমতা বা সরকার হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন বা করছে।
অপর দিকে একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে রয়েছে যারা বার বার ক্ষমা চেয়ে অথবা ভিন্ন কৌশলে ক্ষমতায় এলে বার বার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানি , অন্যায় , অত্যাচার জুলুম করে পিছন পথ অবলম্বন করে ক্ষমতায় জোর করে এক নায়কতন্ত্র ব্যবস্থা করে। এক নায়কতন্ত্র বা বাকশালী প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় যারা ব্যাকুল তারাই হচ্ছে বর্তমান স্বৈরাচার সরকার অর্থাৎ মৌলবাদী দল। আমার রাজনীতি থেকে পাওয়ার কিছু নেই, শুধু সাধারণ জনগণের অন্তরের অন্তরস্থলের কষ্টের সমাধানের চেষ্টায় নিজেকে সামিল করা ছাড়া। আমি সত্যি কথা বলি বা লিখি এতে কারো পক্ষে গেলেও আমার করার বা সুবিধা নেওয়ার কিছু নেই কারন নিজের চিন্তায় মগ্ন আমি নয়। যেখান থেকে আমাকে বাধা দেওয়া হবে সেখান থেকেই আমি সুন্দর সমাধানের মাধ্যমে জনগণের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করেই যাবো ইনশাল্লাহ। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। যেই দলের পরিকল্পনা সুদূর মেয়াদী তাদের কর্মের বাস্তবতা যুগ থেকে যুগান্তরের ফসল। জামায়াতে ইসলামীদের মূল উদ্দেশ্য একটি সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র, কেবল মাত্র, একমাত্র ইসলামের মূল্যবোধের আলোকে ও দ্বীন প্রচারের মাধ্যমে অগ্রগতি। সব রাজনৈতিক দলের একটি দর্শন রয়েছে তেমন জামায়াতে ইসলামীর দর্শন হচ্ছে ইসলামী দর্শন। যেই দর্শনে পরিপূর্ণতা রয়েছে ইসলামী বিধান। ইসলামী বিধানের বাহিরে জামায়াতের কর্মীও হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই সেখানে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।
সত্যি বলতে আমি আমার জানার ইচ্ছে থেকেই জেনেছি। তাই সত্যি কথা তুলে ধরতে আমি উপর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাইনা। জামায়াতে ইসলামের একজন কর্মী সম্পর্কে আমরা জানি তাহলে বুঝবো তেমন আদর্শবান ছাড়া জামায়াতের শীর্ষে উঠে আসা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বহু রাজনৈতিক দল রয়েছে কিন্তু জামায়াতে ইসলামী তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন সেই কারণেই ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের লক্ষস্থানে। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা রাজনীতি করে পেশা হিসেবে আর জামায়াতের রাজনীতি করতে নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আসতে হয় এবং পাশাপাশি আত্নত্যাগ, উদারতা ও উচ্চ মানের মন মানসিকতা অত্যাবশক অবশ্য ব্যতিক্রম কিছু চারিত্রিক বিকলঙ্গ লোক ছাড়া। জামায়াতে ইসলামী যদি মৌলবাদের দল হয় তাহলে সর্ব প্রথম তারা এতো দিনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে উত্তপ্ত করে ফেলতো। বরং তা না করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মীরা নিজের জীবনের আত্নত্যাগের মাধ্যমে যে নিদর্শন বাংলাদেশের মাটিতে বপন করে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতে ঠিকই জেগে উঠবে সর্বত্র বিজয়ের মাধ্যমে। জামায়াতের নেতা কর্মীরা গত ৭ বছর ধরে যেভাবে নিশ্চুপ ভাবে নির্যাতিত , গুম খুন হচ্ছে তার কিঞ্চিৎ যদি বহিঃপ্রকাশ ঘটাত তাহলে বর্তমান সরকার এতো দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারত না। বরং সেই বহিঃপ্রকাশ জামায়াতে ইসলামী দেখায়নি বা দেখাবেও না, কারণ জোর করার রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী নয়। জামায়াতের কর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত একটি শিক্ষা তারা দিয়ে থাকেন সেটা হচ্ছে -যেমন মানুষের শরীর; যদি কারো হাত পা বা অন্য কোন অঙ্গ পতঙ্গে কেটে যায় তাহলে আমরা সরাসরি মাথায় ব্যাথা অনুভব করি তেমনি জামায়াতের কোন নেতা কর্মীর কিছু হলে সরাসরি জামায়াতের শীর্ষ নেতারাও একই কষ্ট বা ব্যাথা অনুভব করে।
এই অনুভূতির কারণেই জামায়াতের একতা কেউ ভাঙতে পারবে না। শুধু তাই না নির্যাতিত নেতা কর্মীদের ক্ষয় ক্ষতির সাহায্য সহযোগিতা জামায়াত করতে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। জামায়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাহু বলে নয় বরং মন জয়ের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করে জাতির কাছে তুলে ধরা , তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দ্বীন প্রচারে মানুষের উপকার করে আত্নার সম্পর্ক গড়ে তোলা। জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার ছাড়া বাস্তবে তাদের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আন্তরিকতা ছাড়া জামায়াতের ভিতরে কোন রকম অহংকার স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ একেবারেই নগন্য। জামায়াতের আরও একটি বড় আকর্ষণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বাছাই করা। আওয়ামীলীগের শুরুটা ভালোই ছিল কিন্তু বাস্তবতা খুবই কঠিন স্বার্থপরতা ও মৌলবাদীতায় পরিপূর্ণ। দলের ভিতর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া একেবারেই নেই। দলটির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায়ন। প্রথম থেকেই ৭১'এর পরবর্তী চার বছর সময়কার চিত্র পরিস্কার করে দেয় আওয়ামীলীগের অবস্থান। ক্ষমতায় টিকে থাকতে যা করার প্রয়োজন এই দলটি তাই করে থাকে। যেমন – নীতিগত ভাবে বহু দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধারা ও ৭১'এর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রভাবিক ব্যক্তিত্বরা দেশের স্বার্থে আওয়ামীলীগ বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি আদর্শবান নেতা সিরাজ সিকদার সহ অসংখ্য দেশপ্রেমিকদের জীবন দিয়ে হয়েছিল ৭১'এর পরবর্তী সময়ে। স্বাধীন দেশে পরাধীনতায় নিম্নজিত হতে হয়েছিল গোটা জাতিকে। তাই ৭৫'এ শেখ মজিবুর রহমান নিহত হলে গোটা জাতি নফল নামায ও রোজা রেখে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেছিল। এই মুক্তির স্বাদের প্রতিফলন হিসেবেই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ শেখ মুজিবর রহমান নিহত হবার পর ফের আবার যখন ' কাদেরীয়া বাহিনী ' বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তাদের অর্থাৎ কাদেরীয়া বাহিনীর সদস্যের প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করে প্রতিহত করেছিল। শুধু মাত্র বাকশালী প্রতিষ্ঠা ও শেখ মুজিবর রহমানের মৌলবাদীতার কারণেই ৭৫'এ জনপ্রিয়তা শূন্য অবস্থায় বিদায় নিতে হয়েছিল শেখ মুজিবর রহমানকে। যার পর দীর্ঘ ২০ বছর পর আওয়ামীলীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসেই শুরু করে দিল আবার তাদের পুরনো ঐতিহ্যের পথে চলা। যার মাসুল দিয়েছিল ২০০১ এর নির্বাচনে। ২০০১ এর নির্বাচনে ভরাডুবি আবার ভাবতে শুরু করে এবং সফল হয় ১/১১'এর নীল নকশায়। বিএনপি ও জামায়াতের জোটের জোট ভাঙ্গার জন্য মৌলবাদী ভূমিকায় পুরোপুরি সক্রিয় আওয়ামীলীগ সরকার। বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের জগন্য সময় মানুষ আজ অতিবাহিত করছে এই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে। এই ভবিষ্যৎবাণী অবশ্য প্রায় ১৫ বছর আগেই শেখ হাসিনার সাবেক সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা মৃত মতিউর রহমান রেন্টু তাঁর বই " আমার ফাঁসি চাই " গ্রন্থে হুঁশিয়ারি করেছিলেন যা আজ হুবুহু মিলে যাচ্ছে। আমি নিজ জীবনে যা দেখার দেখেছি খুব কাছ থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে। এখন দেখা ও উপলব্ধি করার পালা দেশবাসীদের যা যথারীতি দেখছে ও ফল ভোগ করছে। বাংলাদেশের জন্য সততার নিদর্শন রেখেও মিথ্যা রাজনৈতিক হয়রানীতে পড়ে ফাঁসির রশিতে শহীদ বরন করতে হল মতিউর রহমান নিজামীকে। ২০০০ সালের ১৯ নভেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। তবে কারাবন্দী থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করছেন নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ। মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ সালে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলনেতার দায়িত্ব পালন করেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য জামায়াতের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংসদে নিজামী বিল উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদে যোগদান করেন। মাওলানা নিজামী দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জাতীয় সংসদ ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করেছেন। এতে জামায়াতের ক্ষতি নয় বরং জনপ্রিয়তা বেড়ে গেল সরকারী দলের চেয়ে অধিক থেকে অধিকতর।
লেখকঃ কলামিস্ট ও যুগ্ন মহাসচিব , বাংলাদেশ লেবার পার্টি