ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের রাজনীতি দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গেছে এই কথাটা বহু পুরোনো। এই আমলে এসে এই কথাটা পুরোপুরি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। জনতার ভোট বাদে টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাসীন দলে চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী, লুটেরারা কেবল এখন আর সহযোগী নয়, মূল স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ ভারতে খুন হওয়া আওয়ামী এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার।
অপরাধজগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এই বিতর্কিত এমপি কয়েকদিন আগে ভারতে যান। সেখানে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত এবং তাঁর আশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠা এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে উঠেন। তবে সেখান থেকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে একদিন বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। সেই ব্যবসায়ী কলকাতার পুলিশকে এবং আনারের মেয়ে ঢাকার পুলিশকে জানানোর পর বুধবার তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ভারতীয় পুলিশ। তারা জানিয়েছে, আনারকে হত্যা করে লাশগুলো কয়েক টুকরা করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারুল আজীম আনার ২০০৪ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইন্টারপোল থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পাননি। ২০০৯ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। টানা তিন মেয়াদে এমপি তিনি। গত বছর কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আনোয়ারুল আজীম।
আনারের দলের নেতা ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সে (এমপি আনার) কি ছিল বড় কথা নয়, তাঁর জনপ্রিয়তা দেখেই দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’তিনি রীতিমতো হুমকির সুরে বলেন, “আপনারা এখন বলছেন কলকাতায় তাকে চোরাকারবারি বলছে। আমি সাংবাদিকদের বলব আপনারা কি তিন-তিনবার জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন কি আপনারা এটা পেয়েছেন। এখন ভারতীয় সাংবাদিকেরা কোন তথ্য আনল, সেটার উদ্ধৃতি দিচ্ছেন। আপনারাতো এই দেশের নাগরিক, সে যদি অপরাধী হয়, সেই অপরাধ টা আপনাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কেন এল না।“
কাদের সাহেব খুব ভালো করেই জানেন ভোটবিহীন রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার বদলে অস্ত্র ও অর্থের জোর বেশি জরুরি। অপরাধীদের তোয়াজ করা জরুরি, জনতাকে নয়। আর এই পরিবেশে সাংবাদিকদের সাধ্য নেই এসব ক্ষমতাশালী অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচনের। কেউ করলে তাঁর পরিণতি ভয়াবহ।
দেশের সবাই কমবেশি এসব আনার, শামীম ওসমান আর জেলায় জেলায় আওয়ামী পান্ডাদের কুকীর্তি জানে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গিয়ে এই দলটা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, বছর তিনেক আগে মানব এবং অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতে সাত বছরের কারাদণ্ড পান এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। রাজনীতিতে তেমন পরিচিত না থাকলেও হুট করেই ২০১৮ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন লক্ষীপুর-২ আসনে। আর আশ্চর্যভাবে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে সেই নৈশ ভোটে পাপুলকে সমর্থন দিতে সরে দাঁড়ায় মহাজোটের প্রার্থী। সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিপুল ধনী হওয়া পাপুলের অপরাধ কাদের সাহেবদের অজানা ছিল না। বরং এসব অপরাধীদের টাকাই ছিল তাঁর দলের লক্ষ্য। পাপুল, আনারদের মতো লুটেরারাই জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের মেরুদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে পুলিশ, প্রশাসন আর ক্ষমতা দিয়ে এসব ধামাচাপা দিলেও আওয়ামী এমপিদের কুকীর্তি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে।