ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নাম ভাঙিয়ে নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকায় আব্দুল মান্নানের বসতবাড়ির ১৫ শতক জমি দখল করা এবং একতলা ভবন ভাঙচুর ও গাছ কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় 'প্রভাবশালী ভূমিদস্যু' মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান শুক্রবার (৭ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নড়াইল সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ওই রাতেই 'প্রভাবশালী ভূমিদস্যু' মোহাম্মদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
থানার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ উল্ল্যাহসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন ধোপাখোলা মোড় সংলগ্ন নাছিমা বেগমের সাথে মোহাম্মদ উল্ল্যার জমি নিয়ে বিরোধ আছে। জমির নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু মোহাম্মদ উল্ল্যাহ কিছুদিন আগে তার লোকজন নিয়ে জমিতে থাকা গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। এই সময় নাছিমা বেগমসহ তার পরিবারের লোকজন বাধা দিলে মোহাম্মদ উল্ল্যাহসহ তার লোকজন হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপির নাম ব্যবহার করেন। তারা এমপির লোক বলে পরিচয় দিয়ে ঘটনাস্থলে নাছিমা বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর ও গাছপালা কেটে ক্ষতি করেন। তারা এমপির লোক বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করেছে। যা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপি অবগত নয়।
এদিকে শনিবার (৮ জুন) বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসান, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেন ও ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে ও এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলায় আব্দুল মান্নানের কাছে ২০০৮ সালে উজিরপুর মৌজার ধোপাখোলায় ৭৭৩ নম্বর এস এ খতিয়ানের ১১৫৭ ও ১১৫৯ দাগের ১৫ শতক জমি কিনে নাম পত্তন ও নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। গত ৫ বছর আগে ওই জমিতে একতলা পাকা দালান করে বসবাস করে আসছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের দিকে বাড়ির মালিক আব্দুল মান্নান অসুস্থ ছিলেন। এজন্য সপরিবারে দেড় মাস ঢাকায় ছিলেন। এ সুযোগে মোহাম্মদ উল্লাহ লোকজন নিয়ে ওই বাড়িটি ভেঙে ফেলেন। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট শুক্রবার (৭ জুন) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত হলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন-কর্মকর্তাসহ সবার নজরে আসে।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মালিক আব্দুল মান্নানের স্ত্রী নাছিমা বেগম জানান, ‘২০১০ সালে নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর মৌজার ধোপাখোলা এলাকার ৭৭৩ নম্বর এসএ খতিয়ানের ১১৫৭ ও ১১৫৯ দাগের ১৫ শতক জমি কিনে নাম পত্তন করে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছি। ওই জমির ওপর আদালতের একটি স্থিতিবস্থার মামলা রয়েছে। তারপরেও নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকার ভূমিদস্যু মোহাম্মদ উল্লাহসহ তার লোকজন বাড়ির ৪টি কক্ষ, একটি রান্না ঘর ও একটি গোয়াল ঘর ভেঙে ফেলেছে। প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল, জানালা ও দরজা লুট করে নিয়ে গেছে। বাড়ির প্রায় ১০টি গাছপালা কেটে ফেলেছে। এখন মাথাগোঁজার ঠাঁইও হারিয়ে ফেলেছি। বিষয়টি সদর থানার ওসি, এলাকার মাতব্বর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এখন আমাদের খোলা আকাশের নিচের জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জমির আগের মালিক গোলাম রসুল মোল্যা (৬০) বলেন, আব্দুল মান্নানের কাছে আমি জমি বিক্রি করেছি। এখন শুনছি জালিয়াতি করে মোহাম্মদ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি রেকর্ড করে নিয়েছে। আমি তাকে চিনিও না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
ধোপাখোলা এলাকার নাছিমার প্রতিবেশী কানাই দাস, দুলাল বিশ্বাস, ভরত বিশ্বাসসহ এলাকাবাসী বলেন, হঠাৎ করে মোহাম্মদ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি এ জমির মালিকানা দাবি করছে। তাদের একতলা পাকা দালান ঘর ভেঙে দিয়েছে। আমরা দালান ঘর ভাঙতে দেখে প্রথমে ভেবেছি, আব্দুল মান্নান মনে হয় জায়গা-জমি বিক্রি করে দিয়েছে। পরে জানতে পারি, জালিয়াতি চক্র দখল করেছে। আমাদের দাবি, প্রকৃত জমির মালিক আব্দুল মান্নানকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিদ্ধার্থ সিংহ পল্টু বলেন, যারা নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকায় আব্দুল মান্নানের বসতবাড়ির ১৫ শতক জমি দখল করে একতলা ভবন ভাঙচুর ও গাছ কেটেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর এই ঘটনায় যদি ছাত্রলীগের কেউ থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন,‘বিষয়টি ও অপরাধকারীদের সম্পর্কে এমপি মহোদয় মোটেও অবগত নন। যারা তাঁর নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য শুক্রবার (৭ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নড়াইল সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) তারেক আল মেহেদী বলেন, ঘটনাটি গত নভেম্বর মাসের। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। বাড়ি ভাঙচুর ও গাছ কাটার ঘটনায় সে যাতে আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য মোহাম্মদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।