DMCA.com Protection Status
title="৭

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া কর্মকর্তারা কেমন আছেন?

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত, সমালোচিত সাবেক এ সেনাপ্রধানকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে দেশটির অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তার সফরের পরপরই জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। জেনারেল আজিজের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়ও উল্লেখ করা হয়।

গণতন্ত্রের অবনতি ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, তার (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ) তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়েছে।

আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে, ব্যক্তি স্বার্থের বিনিময়ে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনি বুঝতে পারছেন না। এর আগে ২০২১ সালে তাকে এবং তার পরিবারকে নিয়ে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ প্রচারিত হলে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী এবং তাকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তখন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ফেসবুকে খুব গর্ব করে ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক’ প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। জেনারেল আজিজ স্বাভাবিকভাবেই চাকরি থেকে অবসরে যান।

তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহম্মেদ এবং ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মানবাধিকারের প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ তাদের কেউ নন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কাউকে পুলিশ, সেনা, র‌্যাব বা প্রশাসনের বড় পদে বসায়নি।

অবসরপ্রাপ্ত এই দুই কর্মকর্তার বিষয়ে সরকারের এসব বক্তব্যকে ‘আইওয়াশ’ বা ‘রাজনৈতিক কৌশল’ হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালে মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও রাজস্ব দপ্তর থেকে র‍্যাবের তৎকালীন ও নির্দিষ্ট সময় কাজ করা সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে আওয়ামী লীগ সরকার তা মানতে পারেনি। এ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলতেও দেখা যায় দলটির শীর্ষ নেতাদের।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাতজনের বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। এরপর সামনে আসে ২০২৪ সালের নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করে এবং তা কার্যকর করা শুরু করে।

র‍্যাবের দুজন কর্মকর্তা জানান, তারা সরকারের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা দেখতে চেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর একাধিক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে পদন্নোতি ও পুরস্কৃত করেছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ।

বেনজীর আহমেদ ছাড়াও ওই সময় নিষেধাজ্ঞা পান র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে পুলিশ প্রধান। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১৫ তারিখ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি র‍্যাবের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু তাই নয়, মামুন নিয়মিত অবসরে যাওয়ার আগে সরকার দেড় বছরের জন্য ২০২৪ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত তার দায়িত্বের মেয়াদ বৃদ্ধি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা খান মোহাম্মদ আজাদ ২০২১ সালের ১৬ মার্চ থেকে পদোন্নতি পাওয়া পর্যন্ত র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন ।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পুলিশ সপ্তাহে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আজাদকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেলে পুরস্কৃত করা হয়।

কর্নেল আজাদ পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি সেখানকার গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে শিক্ষারত রয়েছেন।

তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার ২০১৯ সালের ২৭ জুন থেকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। র‍্যাব ছাড়ার পর তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) চট্টগ্রাম ডিটাশমেন্টের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

মো. জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৭ জুন পর্যন্ত র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) ছিলেন।

র‍্যাব ছাড়া পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত।

আর মো. আনোয়ার লতিফ খান ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) পদে ছিলেন।

আনোয়ার লতিফ খান বর্তমানে বিজিবিতে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, তিনি চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বিএসএফের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন।

গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু তিনদিনের ঢাকা সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর সেরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এরপর ভিসানীতি এবং র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ভিসানীতি নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। তারাও কথা তোলেনি, আমরাও না। এখন তো মনে হচ্ছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিএনপির ওপর দেয়া উচিত। তবে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমরা তুলেছি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত দেয়ার বিষয়েও কথা বলেছি। তখন তারা বলেছে, এ দুটা বিষয় তাদের বিচার বিভাগের বিষয়। তারা বিচার বিভাগকে জানিয়েছে যে আমাদের র‍্যাবের বিষয়গুলোর উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এটার একটা প্রক্রিয়া রয়েছে, সে অনুযায়ী তারা কার্যক্রম এগিয়ে নেবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবারই একই কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা হয় যে র‍্যাবের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থার রয়েছে এবং বাংলাদেশ বারবারই ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ঘটে যাওয়া আলোচিত সাত খুনের বিচারকে একটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে। যদিও নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের দশ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় হতাশায় ভুগছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হলেও আপিল করে উচ্চ আদালতে হয় এ মামলার নিষ্পত্তি। এর মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দেন উচ্চ আদালত। তবে আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির শুনানি বন্ধ থাকায় এখনও কার্যকর হয়নি চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রায়।

‘দেখুন, যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা দেখতে চায়। ধরুন টেকনাফের একরামুল হকের ঘটনা। সেখানে কি বিচার হয়েছে? না,’ বলছিলেন সাবেক সেই কূটনীতিক৷

একরামুল হক টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর এবং টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালের ২৬ মে মাদক বিরোধী অভিযানে র‍্যাবের সাথে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। কিন্তু পরে একরামুলের মোবাইল ফোনে নিহত হওয়ার আগ মুহূর্তের তার স্ত্রী এবং মেয়ের সাথে কথোপকথন ফাঁস হয়ে গেলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার টেকনাফ থানায় র‍্যাব একটা মামলা করে।

সাবেক কূটনীতিক আরও বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ এর বিরুদ্ধে এখন যা হচ্ছে তাও কোন তো মানবাধিকার প্রশ্নে নয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কেবল। বিষয় দুটি ভিন্ন। সরকার, উচ্চ পর্যায়ের না পারলেও গুলি করেছে এমন নিচের পদবীর সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে পারতো।’

তিনি মনে করেন, ‘র‍্যাবকে ভেঙে দিয়ে নতুন নামে ভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলতে হয়তো তা কাজ করতে পারতো।’

কক্সবাজারে চাকরি করেছেন ও করছেন এমন দুজন সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার তদন্তে র‌্যাবকে গুলি ব্যবহারের বৈধতা দিয়েছেন। এবং এ সংক্রান্তে যে মামলা হয় তাতে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল হালিম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন। তিনিও কোনো প্রতিকার পাননি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরপরই মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার কর্তৃপক্ষকে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর চিঠির দিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।

বেনজীর আহমেদের সাথে একই অভিযোগে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তৎকালীন র‍্যাব-৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মিফতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদকে। কক্সবাজার তখন র‍্যাব-৭ ব্যাটালিয়নের এর আওতাধীন ছিলো। ঘটনার পরে, কক্সবাজারে র‍্যাব-১৫ নামে আরও একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করে সরকার। মিফতা উদ্দিন আহমেদ এখন প্রমোশন পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফে কর্মরত।

এ প্রসঙ্গে গুম হওয়া পরিবারের সংগঠন মায়ের ডাকের অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া কাউকে বিচারের সক্ষমতা রাখে না। বেনজীর বা আজিজ আহমেদের সাথে এখন যা হচ্ছে তা কেবলই ‘আইওয়াশ’। মানুষকে ব্যস্ত রাখা। যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ তারা তো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তারা প্রমোশন পাচ্ছেন এবং তারা সবাই সরকার কাছের লোক।

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকারের প্রশ্নে বিচার চাইছি কর্ণপাতও করছে না এ সরকার। বরং আমরা নিগৃহীত। আমাদেরকে নিয়ে নিয়মিত উপহাস করে এই সরকার।’

বিরোধী দলগুলো দীর্ঘদিন থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, গুমসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। তারা বরাবরই সরকারকে অভিযুক্ত করছে। মাঠের আন্দোলনেও তারা ন্যায় বিচারের পাশাপাশি মানবাধিকার ক্ষুন্ন করছে বিভিন্ন বাহিনীর এমন সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছে।

বেনজীর আহমেদ ও আজিজ আহমেদের বিষয়গুলো সম্প্রতি আলোচনায় আসলে আমার বাংলাদেশ পার্টির পক্ষ থেকে তাদের বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‍্যাব এবং এর পরিচালকসহ সাতজনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমান দখলদার সরকার এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোন তদন্ত কমিটি করেনি।’

তিনি বলেন, ‘কোন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বা স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়নি, বরং সরকারের তাবেদারি করার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার পরেও র‍্যাবের দায়িত্বে থাকা দুইজন মহাপরিচালককে পদন্নোতি দিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক করা হয় পর পর।’

‘শুধু তাই নয়, বর্তমান পুলিশ প্রধানকে অবসরে যাবার সাথে সাথে আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এই অনির্বাচিত সরকার মানবাধিকার লঙঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার ও জবাবদিহিতার বদলে তাদের পুরস্কৃত করেছে। কারণ, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে এই সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় কর্মীদের মতো ব্যবহার করেছে যা কখনো কাম্য ছিল না,’বলেন ফুয়াদ।

এসব বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!