ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কওমি মাদরাসায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পৃথক পৃথক বিবৃতি অব্যাহত রয়েছে।
আজ শনিবার (১৫ জুন) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, কওমি মাদরাসা হলো দেশপ্রেমিক আদর্শ নাগরিক তৈরির কারখানা। শিক্ষা সিলেবাসের দিক থেকে কওমি মাদরাসার সিলেবাস ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে বিস্তর ফারাক ও আদর্শিক পার্থক্য বিদ্যমান।
তিনি বলেন, কওমি শিক্ষা সিলেবাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের আদর্শ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক ও বিপরীত। ছাত্রলীগ সেক্যুলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কওমি মাদরাসা একমাত্র তৌহিদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী। উভয়পক্ষের মধ্যে মতাদর্শের কোনো মিল নেই। তাহলে কওমি মাদরাসায় ছাত্রলীগ কীভাবে রাজনীতি করবে? হ্যাঁ ছাত্রলীগ যদি কওমি মাদরাসার চিন্তাচেতনার আলোকে তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঢেলে সাজাতে পারে, তাহলে ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নিজেদেরকে আদর্শবান ও নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে প্রমাণ করে দেখাক। দেশের সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইসলামি সংগঠনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এটা খুব স্পষ্ট, ছাত্রলীগের মতো সংগঠন কওমি মাদরাসায় নেই বলে সেখানে সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চরিত্রহীনতা নেই। কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন তো ছাত্রলীগের বেশি। কওমি মাদারাসার ছাত্রদেরকে কাউন্সেলিং করানোর দরকার নেই। তারা নিজেরা দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি হিসেবে দেশও বিদেশে অসামান্য অবদান রেখে চলছে। কওমি মাদারাসার ছাত্রদের থেকে বেশি দেশপ্রেমিক খুব কমই আছে। অপরদিকে প্রচলিত ধারার সংগঠনগুলোই দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে। বরং কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্বসূরিদের মতো দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, চরিত্রবান।
ইসলামী আইনজীবী পরিষদ : দেশের স্বতন্ত্র ধারার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কওমি মাদরাসা নিয়ে নতুন করে চক্রান্তের নীলনকশায় মত্ত শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বক্তব্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী আইনজীবী পরিষদ।
শনিবার ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান শেখ, সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. মশিউর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, সেক্রেটারী জেনারেল অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট হানিফ মিয়া, অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, অ্যাডভোকেট শহিদুল হক তোতা, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট জমারত আলী, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার, অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান, অ্যাডভোকেট বাইজিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট এম হাছিবুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, কওমি মাদরাসাই হলো একমাত্র শিক্ষা যাতে সরকারের এক পয়সাও ব্যয় নেই। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলছে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবেদিতপ্রাণ ওলামায়ে কেরাম। অপরদিকে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রচলিত ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ে ছাত্রলীগের মতো খুনি, ধর্ষক, লম্পট, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, দেশের সম্পদ পাঁচারকারী ছাত্রলীগ নেতা তৈরি করছে। তাছাড়া ছাত্রলীগ সরাসরি সেক্যুলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। অপরদিকে কওমি ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরেট আল্লাহওয়ালা, মানবতাবোধ আদর্শ জাতি তৈরি করছে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব আজ শনিবার (১৫ জুন) এক বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, কওমি মাদ্রাসাগুলো যুগ যুগ ধরে দ্বীনি শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ সুনাগরিক তৈরি করছে। কওমি মাদ্রাসায় কোনো জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসী তৈরি হয় না এটা আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত। কওমি মাদ্রাসার ইসলামী পরিবেশ এবং তার স্বকীয়তা ধ্বংস করার অংশ হিসেবেই ছাত্রলীগের রাজনীতি চালু করার ষড়যন্ত্রে নেমেছেন শিক্ষামন্ত্রী। দেশবাসী কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা ও ইসলামী পরিবেশ ধ্বংসের যেকোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে। তিনি শিক্ষামন্ত্রী এ সম্পর্কিত বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ : ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুদ, সেক্রেটারী জেনারেল বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান কওমি মাদরাসায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আজ এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, দেশের স্বতন্ত্র ধারার একমাত্র বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কওমি মাদরাসায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নামে নতুন করে চক্রান্ত মেতে উঠেছেন শিক্ষামন্ত্রী নওফেল। কওমি মাদরাসায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী আছেন, যারা দেশ, ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে দেশবিদেশে ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও কওমি ছাত্ররা দেশের সুনাম কুড়িয়ে আনছেন। যাতে সরকারের কোন ধরনের ব্যয় নেই। এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের মতো চাঁদাবাজ, ধর্ষক, খুনি তৈরি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মন্ত্রী বলছেন কওমিদের কাউন্সিলিং করতে হবে। কাউন্সিলিং কওমিদের করার প্রয়োজন নেই। কাউন্সিলিং প্রয়োজন ছাত্রলীগের নেতাদের। যাদের চরিত্র নেই, যারা মানুষকে কষ্ট দেয়, চাঁদাবাজি করে, টেন্ডারবাজি করে, চোরাচালানি করে, দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে।