ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগের বছরের মতো গতবছরও সুইস ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিক গতিতে টাকা সরিয়েছে বাংলাদেশিরা। মোট কথা, সুইস ব্যাংগুলোতে অস্বাভাবিক হারে কমছে বাংলাদেশিদের আমানত।
২০২২ সালে বিস্ময়কর গতিতে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশিরা। গত বছর সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে সেই খবর জানিয়েছিল। ২০২৩ সালেও সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের টাকা সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা অব্যাহত ছিল এবং তা উল্লেখ করার মতো হারেই সরিয়েছ।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩২ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৪ কোটি টাকা।
অথচ গত বছরের শুরুতে এই আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁ। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬৫ শতাংশ অর্থ কমেছে। আগের বছর অর্থ কমার এই হার ছিল ৯৪ শতাংশ।
আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্রাঁ। ২০২২ সালের শেষে তা কমে মাত্র সাড়ে পাঁচ কোটি ফ্রাঁ-এ এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকে কমে ২০২৩ সালের শেষে পৌনে দুই কোটি ফ্রাঁ-এ এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ কমতে কমতে দুই বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকা।
গোপনে অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য বহুদিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। তাতেই ওঠে আসছে এসব তথ্য।
তবে, প্রায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশির আমানত বৃদ্ধির পর হুট করে তা কমছে কেন, এর ব্যাখ্যা নেই ওই প্রতিবেদনে। ধারণা করা হচ্ছে, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কমতে থাকায় বাংলাদেশিসহ অনেক দেশের ধনীরাই এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো ট্যাক্স হ্যাভেন দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।