ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত এবং প্রকল্পটিতে যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের সফরের শেষ দিন আজ শনিবার (২২জুন) এই আগ্রহের ইঙ্গিত বা বিশেষ বার্তা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই তিস্তা প্রকল্পে চীন বিনিয়োগে আগ্রহী। তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে পানি ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট) ও পানি সংরক্ষণের (কনজারভেশন) প্রকল্পে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করলেও ভারত স্পষ্ট করে বলছে, এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পত্তি না হওয়া তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভারত এটিকে ‘তিস্তা রেস্টোরেশন প্রজেক্ট’ বলে বর্ণনা করলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ তাদের অংশে তিস্তা নদীর ভাটিতে যেটিকে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বলে এতদিন বর্ণনা করে এসেছে, সেই দুটি আসলে একই!
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন বলেছেন, চীনের চাপের কথা মাথায় রেখে তিস্তা নদীর ড্রেজিং ও উন্নয়নে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত পরিকল্পনায় এই প্রকল্প নিয়ে ভারতের আগ্রহের বিষয়ে দেশটির ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। বেইজিং এই প্রকল্পের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এমন পরিস্থিতিতে কোনো চীনা সংস্থাকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা ঢাকাকে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
শেখ হাসিনা আগামী মাসে চীন সফরে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা এখন বলছেন, ভারতের এই ঘোষণা তাকে প্রকল্পের বিষয়ে বেইজিংয়ের চাপ কমাতে সাহায্য করবে। আন্তঃসীমান্ত তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের তথ্যসহ স্পর্শকাতর অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছে চীন, এ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি, ভারতের ‘চিকেন নেক’ বা দেশের উত্তর-পূর্ব অংশকে বাকি অংশের সঙ্গে সংযোগকারী সরু রাস্তার কাছে অবস্থিত প্রকল্পে চীনা কর্মীদের উপস্থিতির ব্যাপারে ভারতের বাড়তি উদ্বেগ রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিকদের বলেছেন, আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনা একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর’ ব্যাপার। স্বাভাবিক কারণেই ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের রাষ্ট্র বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়াদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যার মধ্যে তিস্তা একটি।
কোয়াত্রা বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এটা যতটা না পানি বণ্টনের বিষয়, তার চেয়ে বেশি তিস্তা নদীর প্রবাহ ব্যবস্থাপনার বিষয়। দুই নেতা এ ব্যাপারে ভারতীয় কারিগরী দলের পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস