ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) উচ্চমাত্রার দুর্নীতি কমাতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া তাদের সম্পদের হিসাব নিয়মিত হালনাগাদ করতে বলেছে সংস্থাটি। গত সোমবার বাংলাদেশকে দেওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে আইএমএফ। ওই দিন কান্ট্রি রিপোর্টে এই পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ছাগলকাণ্ডে মতিউর রহমানের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমন সময় এই পরামর্শ দিল আইএমএফ। জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরাও সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আইএমএফও বলেছে, উঁচু-স্তরের দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে, এ বিষয়ে অসম্মতি (নন-কমপ্লায়েন্স) দেখা দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তারা সম্পদের পরিমাণ নিয়মিত হালনাগাদের জন্য একটি মানসম্মত পন্থা অবলম্বন করার কথা বলছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ ঘোষণার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার কথা বলে সংস্থাটি।
সংস্থাটি আরও বলেছে, দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির ক্ষেত্রে সুশাসনের উন্নয়ন এবং দুর্নীতি রোধ ব্যাপক অবদান রাখবে। রাজস্ব ও আর্থিক সুশাসনের উন্নতি, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং নীতি কাঠামো শক্তিশালীকরণও উন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু হয়। সেটি চার দশক পেরিয়েছে। তবে এ নিয়ম পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। অতীতে দেখা গেছে, বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় তাদের অধীন কর্মচারীর কাছে সম্পদের বিবরণী চেয়েও তেমন সাড়া পায়নি।
সরকারি কর্মচারী আইন (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর বিধি ১২ ও ১৩ অনুসারে সরকারি কর্মচারীর স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রি ও সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সম্পদ যেমন জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনতে বা বিক্রি করতেও সরকারের অনুমতি নিতে হয় তাদের। সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে টাকার উৎস সম্পর্কেও তাদের জানানোর নিয়ম রয়েছে। আবার সম্পদ বিক্রি করা হলে তাদের দাম জানাতে হয়। কারণ, কমবেশি দামে সম্পদ বেচাকেনা হলো কিনা, তা যাচাই করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে সম্পদের হিসাব জমা দিতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়। সে কারণে সে সময় সব কর্মচারীই তা দিয়েছিলেন। এরপর সরকার ২০১৫ সালে আরেক দফা সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলে। তবে সেই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি।