ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত মে মাসে ভারত থেকে ছেড়ে যাওয়া অস্ত্রবোঝাই ইসরায়েলগামী একটি জাহাজকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করতে দেয়নি স্পেন। মারিয়ান ড্যানিকা নামের একটি জাহাজ ২১ মে দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব কার্টেজেনা বন্দরে নোঙর করার অনুমতি চেয়েছিল। স্পেনের সংবাদমাধ্যম এল পাইস তখন জানিয়েছিল, অস্ত্রের চালান বহন করা জাহাজটি ডেনমার্কের পতাকাবাহী। এতে ২৭ টন বিস্ফোরক উপাদান ছিল। ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে জাহাজটি ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে যাচ্ছিল। এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে আল জাজিরা।
এই ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে ১৫ মে স্পেনের কার্তাজেনা বন্দরে বোরকুম নামের আরেকটি জাহাজ ভিড়েছিল। ওই জাহাজেও ভারতীয় অস্ত্র ছিল বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
আল জাজিরার নথি অনুসারে, বোরকুম জাহাজটিতে ভারতের বিস্ফোরক বোঝাই ছিল এবং এটি গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।
সাগরের ট্র্যাকিং সাইটগুলো পর্যালোচনা করে আল জাজিরা জানায়, জাহাজটি ২ এপ্রিল ভারতের চেন্নাই থেকে যাত্রা শুরু করে। তবে হুতির হামলা ঠেকাতে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে যাত্রাপথ এড়িয়ে আফ্রিকা ঘুরে যায় জাহাজটি।
ফিলিস্তিনি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থা সলিডারিটি নেটওয়ার্ক জানায়, বোরকুম জাহাজে ২০ টন রকেট ইঞ্জিন, বিস্ফোরক, ১২.৫ টন বারুদসহ রকেট, ১৫০০ কেজি বিস্ফোরক এবং কামানের জন্য ৭৪০ কেজি বারুদ এবং প্রোপেল্যান্ট ছিল।
গোপন সূত্রের বরাতে আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজটির সমস্ত কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের বাধ্য করা হয়েছিল যে কোন অবস্থাতেই আইএমআই সিস্টেম বা ইসরায়েলের নাম নেওয়া যাবে না। আইএমআই সিস্টেমস হলো একটি প্রতিরক্ষা সংস্থা যেটি ২০১৮ সালে ইসরায়েলের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমস কিনে নিয়েছিল।
যদিও আল জাজিরার এসব তথ্য অস্বীকার করছে জাহাজটির সংশ্লিষ্টরা। জাহাজের জার্মান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক এমএলবি ম্যানফ্রেড লাউটারজং বেফ্রাচতুং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জাহাজটি ইসরায়েলে যাওয়ার সময় কোনো অস্ত্র বা অন্য কোনো পণ্য লোড করেনি।
অন্যদিকে, গত ২১ মে স্পেনে নোঙর করতে না দেওয়া ডেনমার্কের পতাকাবাহী আরেক জাহাজ মারিয়ান ড্যানিকাতেও ২৭ টন বিস্ফোরক উপাদান ছিল। যেটি ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে যাচ্ছিল।
আল জাজিরা জানায়, বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা গেছে, গাজায় চলমান মাসব্যাপী যুদ্ধের সময় নীরবে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ করছে ভারত।
চলতি মাসের ৬ তারিখে গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েল বোমা হামলা করে। হামলার পর কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্টাংশের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেই অবশিষ্টাংশের একটি লেবেলে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’।
গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) বলছে, ভারতীয় কোম্পানি প্রিমিয়ার এক্সপ্লোসিভস লিমিটেড এমআরএসএএম এবং এলআরএসএএম ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য প্রপেলান্ট তৈরি করে থাকে যা রকেট মোটরের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, কিন্তু পুরো মোটর নয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিও গাজার বর্তমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলে তাদের পণ্য রপ্তানির কথা জানিয়েছে।
আল জাজিরা আরও জানায়, ইসরায়েল গাজায় সবচেয়ে বেশি হামলা চালাচ্ছে হার্মিস ড্রোন দিয়ে। ইসরায়েল ছাড়াও ভারতে এটির কারখানা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত চুক্তি অনুযায়ী ড্রোন রপ্তানি শুরু করেছে এবং সেগুলি বর্তমানে অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজাতে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।