DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

(মতিউরের বদলি ঠেকাতে ফোন করেছিলেন মঈন ইউ আহমেদ:সাবেক এনবিআর প্রধান বদিউর রহমান

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশে সুশাসন আসলে অবশ্যই মতিউরের  (আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমান) মতো লোকজন এভাবে অপচক্র গড়ে তুলতে পারবে না। অবৈধ সম্পদের পাহাড় হবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান প্রথম বাংলাদেশের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এমনটাই বললেন। মতিউর একসময় তার অধীন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বদলির আদেশ জারি করার পর পড়েছিলেন এক বিশাল জটিলতায়। এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন খোলামেলা।

প্রথম বাংলাদেশ: দেশে মতিউর রহমানের মতো  দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কীভাবে বিদায় করা যায়?

বদিউর রহমান: দেশে সুশাসন নিয়ে আসতে হলে প্রতিটা সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হবে। ন্যয্যতা আনতে হবে। অবশ্যই সাংবাদিককেও সব ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ন থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সাংবাদিককে দেখি নিউজ ছাপিয়ে অর্থ নেয়। আবার অনেকে দেখি মন্ত্রীর পিছে পিছে ঘুরে বেড়ায়। সেই সব মন্ত্রী নিয়ে নানা ধরনের চামচামি করে থাকে। এরাই নানা ধরনের সরকারি সুবিধা পায়। এসব অনিয়ম থেকে ফিরে আসতে হবে সাংবাদিকদের। এই মতিউর রহমানরা কত সাংবাদিকদের ব্যবহার করে কত কিছু বাগিয়ে নিয়েছে। এদের হাজার কোটি টাকা সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুধুই সরকারি বা রাজনৈতিক একটা ক্ষমতা রয়েছে, তা কোনোভাবেই ঠিক নয়।

প্রশ্ন: দুর্নীতিগ্রস্ত মহিউর রহমানের বদলি ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন?

বদিউর রহমান: আমি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মতিউরের রহমানের বদলির আদেশ জারি করলাম। বড় বড় আর্মি অফিসাররা তার জন্য তদবির করলেন। যেমন সেনাবাহিনীর প্রধান মঈন ইউ আহমেদ, মেজর জেনারেল সিনহা ইবনে জামালি, আরও অনেকে।

আমি বলব না মতিউরের উত্থান এখান থেকেই। এই অফিসার আমার সাথে দেখা করার আগেই শুনেছি, সে আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার বেডরুমে যেতে পারত। বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বাসায় তাকে যেতে দেখা গেছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, প্রতিটি সরকারের আমলে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রতিটা সরকারের আমলে তার সম্পদ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েছে। কেউ তাকে ঠেকাতে আসেনি। বরং এদের ছত্রছায়া থেকে সে ফুলেফেঁপে বড় হয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাকে বদলি না করে রেখে দিতে চেয়েছিল কেন?

বদিউর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বন্দর দেখাশুনা করা ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির আমার অফিসে আসলেন। তিনি এসেই প্রতিক্রিয়া (রিয়াকশন) দেখালেন, আমি কেন তাকে বদলি করতে চাচ্ছি। আমি তাকে বললাম, আমি এই অর্ডার বাতিল করতে পারব না। পরে ব্রিগেডিয়ার সাহেব বললেন যে, আমরা তাকে চাই। দরকার আছে। আমি বললাম, কেন দরকার আছে? তিনি বললেন, ওর থেকে অন্য অফিসারদের দুর্বলতাগুলো আমরা দেখতে পারব। সেই  দুর্বলতা বের করে এনবিআরের অফিসারদের রিরুদ্বে ব্যবস্থা নিতে পারব। আমি বললাম, এই অফিসারদের কর্মকাণ্ডের দুর্বলতা বের করার বিষয়টি তো কোনোভাবে এই ডিপার্টমেন্টের জন্য ভালো হবে না। আমি  বললাম, আমি তো আপনার কথা রাখতে পারব না।

প্রশ্ন: সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ ফোন দিয়েছিলেন?

বদিউর রহমান: পরে মেজর জেনারেল সিনহা ইবনে জামালি ফোন করল। তাকে আমি বললাম, মতিউরের বদলি বন্ধ করা সম্ভব না। যেহেতু আমি এনবিআরের চেয়ারম্যান, এটা আমরা জন্য এসিড টেস্ট। এনবিআরের চার মেম্বর আমাকে বলল, মতিউরকে বদলি করে রাখতে পারবেন না। আমি যদি তাকে বদলি না করি তবে তাদের কাছে, আমি তো মেম্বরদের কাছে হাসির পাত্র হয়ে যাব। এরপর আর্ম ফোর্স ডিভিশন থেকে আবার একটা অর্ডার পাঠিয়ে দিল। মতিউরের বদলির অর্ডারটা ক্যানসেল করতে হবে। জেনারেল মাসুদও টেলিফোন করল। আমি বললাম, সম্ভব নয়। তবে আটার সারপ্রাইজ, সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ তো কোনো সময় আমার কাছে কোনো তদবির করেনি। অন্যরা  তদবির করলে নীল কাগজে কোনো সাইন না করে শুধু লিখে দিত, এটা করা যায় কি না। সেনাপ্রধান বললেন, মতিউরের বদলির আদেশটা ক্যানসেল করেন। আমি বললাম, স্যার, আমি যতদূর শুনেছি, মতিউর কোনোভাবেই ভালো না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের  অনেক পাওয়ারফুল মানুষ, আমি যতদূর শুনেছি।

প্রশ্ন: সরকারি চাকরিজীবনের ঘটনা আপনি আপনার দুটি বইতে লিখে রেখেছেন?

বদিউর রহমান: চাকরিজীবনের অনেক ঘটনা আছে। সব কি আর লেখা যায়। অনেক গোপন কথা আছে, দেশের স্বার্থে আড়াল করতে হয়। তবে চাকরিতে আমার অনুভূতিসমূহ একটি বইয়ে আমি লিখেছি। মতিউরের নামসহ এইসব ঘটনা বইগুলোতে আছে। আমার আত্মজীবনীতে এই ঘটনা লিখছি।

প্রশ্ন: আপনি অবসরে চলে যাওয়ার পর মতিউর আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসেছিল?

বদিউর রহমান: অবশ্যই। বদলি হয়ে রাজশাহী যাওয়ার পরও মতিউর আমার বাসায় এসেছিল। আমি সেই দিনই টের পেলাম, আসলে মতিউর কত ক্ষমতাশালী। আমি যখন স্বেচ্ছায় এনবিআর থেকে অবসরে গেলাম, পরে দেখি সে আবার দেখি ফিরে আসল। কিভাবে সম্ভব? এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ফিরে আসল? আমি দেখলাম, আমার পরবর্তী এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ তাকে রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছে।

প্রশ্ন : এর পরে কী হলো?

বদিউর রহমান : এরপর বাজারে সবচেয়ে মজার গুজব বের হল। এ গুজবে আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে গেছি। সবাই বলাবলি করতে লাগল, আমি মতিউরকে বদলি করায় মতিউরই আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এ সবই হচ্ছে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!