ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যারা স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে তারা সাহসী দেশপ্রেমিক উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, তারা এমন যে কেউ যারা স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে, আমাদের ত্রুটি তুলে ধরতে এবং পরিবর্তনের জন্য লড়াই করতে ইচ্ছুক। তাদের মতবিরোধের অর্থ এই নয় যে, তারা অবিশ্বস্ত।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
ভিন্নমতাবলম্বী, বিরোধী রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের সমর্থনে পিটার হাস বলেন, আমাদের দুটি দেশই সাহসী দেশপ্রেমিকদের আত্মত্যাগে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের উভয় দেশেরই সাহসী দেশপ্রেমিকদের প্রয়োজন। কিন্তু এই সাহসী দেশপ্রেমিক কারা? তারা বিদ্রোহী। তারা সাংবাদিক। তারা মানবাধিকার কর্মী। তারা বিরোধী রাজনীতিবিদ। তারা সুশীল সমাজের কর্মী।
পিটার হাস বলেন, স্পষ্টতই, আমাদের গণতান্ত্রিক যাত্রা ঘুরতে থাকা পথের মতো, যা পরিপূর্ণতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা এবং এর অসম্পূর্ণতার প্রতিফলন। ২০২৪ সাল নির্বাচনের জন্য এক অভূতপূর্ব বছর। ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই বছর বেশি মানুষ ভোট দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে, এই বছরের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ অংশ নেবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের নির্বাচন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এবং আমাদের নির্বাচন এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জনগণের কণ্ঠস্বর এবং সবাই যেন আরও সুষ্ঠু গণতন্ত্রের প্রচেষ্টা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আজ আমি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আরও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করতে চাই। আমাদের উভয় দেশই গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
পিটার হাস বলেন, আজ রাতে বাংলাদেশে আমেরিকার স্বাধীনতা উদ্যাপনের সময় আমি স্মরণ করছি আমাদের সম্মিলিত যাত্রার কথা। অংশীদার হিসেবে এবং বিনীতভাবে যুক্তরাষ্ট্র গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করেছে এবং আমরা তা অব্যাহত রাখব।
পিটার হাস আরও বলেন, আজ, আমরা ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাকে সম্মান জানাচ্ছি। আজ আমরা স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং সুখের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এক জাতির জন্মকে উদ্যাপন করছি। এবং আজ, আমরা জনগণের তৈরি, জনগণের জন্য, এবং জনগণের সরকারের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।
তিনি বলেন, আমেরিকার সব নাগরিকের ভূমিকা আমাদের গণতন্ত্রে গভীরভাবে নিহিত। প্রায় ২৫০ বছর আগে স্বাক্ষর হওয়া আমাদের সংবিধান জানায় যে, জনগণই সরকারের ভিত্তি। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, 'আমরা, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ আরও কার্যকর সংগঠন তৈরি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দেশের শান্তি নিশ্চিত করা, সাধারণ প্রতিরক্ষা, জনকল্যাণে ও নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্বাধীনতার সুফলকে সুরক্ষিত করতে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই সংবিধান আদেশ এবং প্রতিষ্ঠা করছি।
পিটার হাস বলেন, জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম ভাষণে এই বিষয়ে আবারও জোর দিয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, আমেরিকার গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আমেরিকার মানুষের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র নিখুঁত নয়, কখনও ছিল না এবং কখনও হবেও না। আমরা নিন্দার ঊর্ধ্বে নই। আমাদের আরও কার্যকর সংগঠনের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সমস্ত মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৭৭৬ সালে পরিস্থিতি এমন ছিল না। দাসত্ব বিলোপ করতে আমাদের ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত সময় লেগেছিল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। ১৯৬৪ সালে, আমরা অবশেষে বর্ণগত, জাতিগত, জাতীয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নারীর বিরুদ্ধে চলে আসা প্রধান বৈষম্যগুলো নিষিদ্ধ করেছিলাম। এবং মাত্র ২০১৫ সালে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট এলজিবিটিকিউআই প্লাস দম্পতিদের বিয়ে করার সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে।