ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এক লাখ টাকায় ছাগল কিনে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এই জন্য তিনি নির্বাচনের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে প্রচার প্রচারণাও চালান। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি তিনি।
২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাদিক অ্যাগ্রোর পেজে একটি পোস্টার পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘বিশিষ্ট শিল্পপতি, তারুণ্যের অহংকার, লাখো যুবকের রোল মডেল, গরীব-দুস্থদের আশ্রয়স্থল, গোয়াল ঘর এবং খামারকে শিল্প পর্যায়ে উন্নতকরণের রূপকার, সৎ ও যোগ্য নেতা, কলাবাগানের কৃতি সন্তান জনাব মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ভাইকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ হিসেবে দেখতে চাই, প্রচারে : ঢাকাবাসী’। সাদিক অ্যাগ্রোর এই ফেসবুক পেজটিতে এক লাখের উপরে লাইক এবং ফলোয়ার রয়েছে। পোস্টারটি ২৭০০ লোক প্রতিক্রিয়া জানায়, ৩২৯ জন কমেন্ট করেন এবং ২৩টি শেয়ার হয়।
পোস্টারটির নিচে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক কমেন্টে লিখেছেন, ‘গোয়াল ঘরের মতো সংসদকেও উন্নত করবেন, এই প্রত্যাশা।’
এদিকে, সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ছাড়াও ইমরান জালালাবাদ স্টিল বিল্ডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান, জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের পরিচালক, জালালাবাদ স্টিল লিমিটেডের পরিচালক, লাকি স্টিল করপোরেশনের অংশীদার, নিপ্পন পেইন্টের পরিচালক, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, ইংলিশরোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি এবং এফবিসিসিআইয়ের লাইভস্ট, পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিসারিজ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির কো চেয়ারম্যান। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদে তিনি আছেন কিনা তা বাংলা আউটলুক যাচাই করতে পারেনি।
অন্যদিকে, সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছাগল কিনতে গিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত আলোচনার জন্ম দেন। তারপর নানা ঘটনার পরিক্রমায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযানের ঘোষণা দেয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা ১১টার পর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ডিএনসিসি। সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় খাল ও সড়কের জায়গা দখল করে সাদিক অ্যাগ্রো চালাচ্ছে।
এদিকে, অভিযানের খবর পাওয়ার পর গত রাত থেকেই সাদিক অ্যাগ্রোর বেশ কিছু গরু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ১০টার পর থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোর সামনে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় এবং খালের জায়গায় থাকা বেশ কিছু স্থাপনা ইতোমধ্যে সরিয়ে নিয়েছে তারা। এ ছাড়া গত রাত থেকেই বেশ কিছু গরু-ছাগল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রকিবুল ইসলাম বলেন, অভিযান হবে এই খবর শোনার পর সাদিক অ্যাগ্রোর বেশ কিছু গরু-ছাগল গতরাতে সরিয়ে নিতে দেখেছি। এ ছাড়া রাস্তার ওপরে তাদের প্যান্ডেল করা ছিল, অস্থায়ী স্থাপনা ছিল সেগুলো তারা সরিয়ে নিয়েছে।
সাদিক অ্যাগ্রোর আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এখানে যে একটি খাল ছিল এটা আর দেখা যায় না অবৈধ দখলের কারণে। এটা অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। অভিযান চলবে এমন খবরে সাদিক অ্যাগ্রোসহ আশপাশের অস্থায়ী অন্যান্য স্থাপনাও নিজেরা কিছু সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে।
খাল দখলের বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, মেয়র মহোদয় আগেই উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করছি। সিটি কর্পোরেশেনের বুলড্রোজার দিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত আছেন।