ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সরকার অনেক আগেই স্বাধীনভাবে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অক্ষম হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রবিবার (৩০ জুন) বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সর্বশেষ দিল্লি সফরটি কার্যতই একপাক্ষিক। এ সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা কিংবা চুক্তি বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ সুনিশ্চিত করে না। তাছাড়া আলোচনায় এমন কিছু বিষয় এসেছে যাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামরিক সহযোগিতার নামে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে আদানির সাথে বিদ্যুৎ আমদানির অন্যায্য চুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মতো অধিকতর কৌশলগত পণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে তোলার চলমান উদ্যোগ, দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর এবং এ সফরে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিল বিএনপি। এতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ভারত সফরে গিয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান অবৈধ মাফিয়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতের সাথে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে তা গোলামির নবতর সংস্করণ মাত্র। কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশ পর্যন্ত রেল যোগাযোগের নামে করিডোর প্রদানের মাধ্যমে যা করা হয়েছে তাতে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের নিশ্চয়ই ১৯৭২ সালে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের গোলামি চুক্তির কথা স্মরণ আছে। ৫২ বছর পর সে ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুন ২০২৪, ভারতের সাথে সমঝোতার আড়ালে যেসকল চুক্তি করা হলো তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্বাধীনতার প্রতি হুমকি
ফখরুল বলেন, এসব চুক্তি—স্মারকের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জোটনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। বস্তুত, এ সকল সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ভূ—রাজনীতিতে নিরাপত্তা কৌশলগত “বাফার স্টেট” হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, যে সাতটি সমঝোতা স্মারক নতুন করে সই করা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রিক। প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশ ভূখণ্ডকে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেন নেক’কে বাই—পাস করে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা থেকেই এসব সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ—বিরোধী এহেন চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। শাসক গোষ্ঠী দাবি করে যে, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্ক ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছেছে। কিন্তু সম্পর্কের তথাকথিত “সোনালি অধ্যায়”—এর সময়কালে বাংলাদেশের জনগণের তরফে প্রাপ্তি শূন্যের কোঠায়। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যকার লেনদেনের প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে কানেক্টিভিটির নামে একের পর এক ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা প্রদান।
সবকিছুই একতরফা
তিনি বলেন, ট্রানজিট—করিডোর দেওয়ার রাজনৈতিক—অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ঝুঁকি সত্ত্বেও সবকিছুই একতরফাভাবে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। একদিকে ভারত পেয়েছে অবাধ স্থল ও নৌ ট্রানজিট যা ভারতের অবশিষ্ট অংশের সাথে উত্তর পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স এর যোগাযোগের সময় ও দৈর্ঘ্য কমিয়েছে সর্বনিম্ন প্রায় তিন চতুর্থাংশ। কলকাতা আগরতলার ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারে। ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের পায়রা, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অগ্রাধিকার সুবিধা। অন্যদিকে বাংলাদেশ নেপালের মাত্র ২১/২২ কিলোমিটারের ট্রানজিট সুবিধা ভারতের কাছে থেকে আদায় করতে পারেনি।
ফখরুল বলেন, একতরফা আগ্রাসী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে ভারতের অবাধ বিপণি কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। দুদেশের সামগ্রিক ২৬ বিলিয়ন বাৎসরিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দুই বিলিয়ন। এর মাঝেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। তীব্র বেকারত্বের বাংলাদেশে কাজ করছে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় যুবক। ভারতের রেমিট্যান্স আহরণের প্রধান উৎসের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, গত ১০ মাসে ভারতীয়রা নিয়ে গেছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার। আমরা জানি, এর বাইরেও অবৈধ পন্থায় নিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার।
ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার যেহেতু বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাই দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্যও তারা সচেষ্ট নয়। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল করিডোর দেওয়ার চুক্তি, তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতা গ্রহণ, প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ, ভারতের ইনস্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যৌথ স্যাটেলাইট সমঝোতা, ডিজিটাল পার্টনারশিপ, গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি ইত্যাদি নানা নাম দিয়ে যে দশটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা থেকে সমঝোতা সই
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণের চাইতে ভারতের কাছে শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা থেকে এসব সমঝোতা সই হয়েছে, তা জনগণের কাছে কষ্ট। এসকল চুক্তির সাথে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। সে কারণেই বহু পূর্বে ভারত ঘোষিত সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় ঋণ চুক্তির (লাইন অব ক্রেডিট—এলওসি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে এ সফর ছিল নীরব। ডলারকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়টি উঠে এসেছে আলোচনায়, অথচ বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের অন্যতম প্রধান মুদ্রাই হচ্ছে মার্কিন ডলার।
ফখরুল বলেন, এভাবে একতরফা আগ্রাসী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে পরিণত করা হয়েছে। ট্যারিফ, নন—ট্যারিফ ব্যারিয়ার পরিহার করে বিপুল বাণিজ্যিক ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার কিছুই এসব সমঝোতায় স্থান পায়নি।
তিনি বলেন, ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, 'ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যাই তো সমাধান হয়ে গেল'। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সাধারণ কূটনৈতিক দরকষাকষির ন্যূনতম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
তিস্তার পানি আদায়ে ব্যর্থতা জাতির সাথে তামাশা
সংবাদ সম্মেলনে তিস্তার পানির অভাবে পর্যুদস্ত অসহায় মানুষের আর্তনাদকে শেখ হাসিনা 'প্যাঁ প্যা' করা বলে আখ্যায়িত করেছেন যা সমগ্র জাতির সাথে তামাশা ও হাস্যরসিকতার শামিল। আমরা সকলেই জানি, কেউ কেবলমাত্র বিরক্ত হলেই 'প্যাঁ প্যাঁ' না করতে বলে। তিনি বলেন, একদিকে ভারত থেকে তিস্তার পানি আদায়ে ব্যর্থতা, অপরদিকে অসহায় মানুষের সাথে এ নিয়ে তামাশা— এটি জাতির জন্য নিতান্তই দুঃখজনক। শেখ হাসিনা তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করেছে। তিস্তা চুক্তি তাদের এজেন্ডাতেই স্থান পায়নি। এদিকে অনেকে মনে করেন, পানি মানুষের জীবন জীবিকা ও জলবায়ুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং পানি নিয়ে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় রেল ট্রানজিটের ফলে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে। অথচ বিশেষজ্ঞরা রেল করিডোরের ফলে বাংলাদেশের লাভ নিয়ে দারুণ সংশয় প্রকাশ করেছেন। জানা যায়, এ ট্রেন বাংলাদেশের কোনো মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না। একতরফাভাবে ভারতকে করিডোর সুবিধা দেয়ার জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। তাহলে শেখ হাসিনা কীভাবে দাবি করেন এ রেল ট্রানজিট বাংলাদেশের মানুষের উপকারে আসবে? অপরদিকে এ রেল ট্রানজিটের কোনো সমীক্ষা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের কারিগরি ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের ইতিবাচক বিশ্লেষণ ছাড়া এ ধরনের রেল—করিডোর প্রদান আত্মঘাতী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী হবে মর্মে মন্তব্য করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা রেল—করিডোরকে ইউরোপের সাথে তুলনা করে বলেছেন, তারা পারলে আমরা পারবো না কেন। কথা হলো ইউরোপের ক্ষেত্রে বিষয়টি বহুদেশীয়, আমাদের ক্ষেত্রে যা কেবলই দ্বিপাক্ষিক। তাছাড়া ইউরোপের সকল দেশে সুশাসন ও ন্যায়নীতি বিরাজমান, যা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ইউরোপের সীমান্তগুলোতে আমাদের মত কাঁটাতারের বেড়া নেই, ঝুলন্ত ফেলানিও নেই। অতএব আমাদের বিষয়টি ইউরোপের সাথে তুলনীয় নয়।
ফখরুল বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য উচ্চ মূল্য নির্ধারিত হবে সেটাই স্বাভাবিক, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা তার ব্যতিক্রম দেখি না, বিশেষ করে যখন খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেন, "আমরা কোন প্রতিদান চাই না। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি সেটা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।" সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, "তলে তলে আপস হয়ে গেছে। ভারত আছে আমরা আছি।" সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছিলেন, "ভারতে গিয়ে বলেছি, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে।" ফলে এদেশে একের পর এক প্রহসনের নির্বাচন হয়, ২০১৪ তে ভোটারবিহীন, ২০১৮ তে নৈশ, আর ২০২৪ এ ডামি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে দশটি চুক্তি—সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, বরাবরের মতো এবারও এসবের বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়নি। তবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে যতটুকু জানা গেছে তাতে
আমাদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গ। আগেই বলেছি, এবারের সফরে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এজেন্ডাতেই ছিল না, অথচ এটাই হওয়া উচিত ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা লক্ষ করছিলাম এই অনির্বাচিত সরকার তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই লুকোচুরি খেলছিল। সাম্প্রতিক কালের ডামি নির্বাচনে সমর্থন আদায়ের দুরভিসন্ধি থেকে সরকার তিস্তা প্রকল্পকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ প্রকল্পে চীনের আগ্রহের কথা আমরা জানি। অপরদিকে ভারত নির্বাচনের পরপরই তার পররাষ্ট্র সচিবকে পাঠিয়ে জানিয়ে দেয় ভারত তিস্তা প্রকল্পে অংশ গ্রহণ করতে চায়। প্রায় দেড় দশক ধরে নানা অহেতুক অযুহাতে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে না, অপরদিকে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর গত ১৪ বছরে তিস্তা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলেও এই সংকটের সমাধান হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় এখনও এটি রয়ে গেছে রুদ্ধকক্ষের দ্বিপাক্ষিক একান্ত আলোচনার স্তরে। এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে তিস্তা পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রশ্ন হল, যাদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে তিস্তার ন্যায্য পানি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, সেই তাদেরকেই তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করলে তা যে স্বার্থ সাংঘর্ষিক ও আত্মঘাতী— সেটা বাংলাদেশের মানুষ বোঝে। শেখ হাসিনা অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই উঠে পড়ে লেগেছে। “তিস্তা প্রকল্পটি ভারত করে দিলে সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়”— শেখ হাসিনার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্যের মাধ্যমে তার উদগ্র ভারততোষণ নীতি দেশবাসীর সামনে পুনরায় উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বর্তমান অবৈধ সরকার প্রকারান্তরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উপর অর্পণ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। যা বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ।