ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে মংডু ছেড়ে পালানোর পথে মিয়ানমারের একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভিড়েছে। নৌকাটিতে ৩৩ জন লোক ছিল। তাদের ৩১ জন মংডু এলাকার রোহিঙ্গা, একজন সেনা ও একজন বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য ছিল।
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) ভোরে মিয়ানমারের নৌকাটি সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভিড়লে দায়িত্বরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা রোহিঙ্গা ও দুই বিজিপ-সেনা সদস্যকে তাদের হেফাজতে রাখেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের ৩৩ নাগরিকসহ একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা সেন্টমার্টিনে ভিড়েছে এমন খবর জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। দ্বীপে তাদের বিজিবির হেফাজতে রেখে পরবর্তীতে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জেনেছি। তবে এখনো কোনো বাহিনীর পক্ষ থেকে আমাকে অফিসিয়ালি বিষয়টি জানানো হয়নি।
এই ব্যাপারে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিজিবির দায়িত্বরত সুবেদার সানোয়ার হোসেন জানান, একটি বড় নৌকায় করে ৩৩ জন মিয়ানমার নাগরিক এসেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ১০ নারী, ১১ শিশু ও ২ জন মিয়ানমার বিজিপি-সেনা সদস্য রয়েছে। তাদের বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবোঝাই নৌকাটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সেন্টমার্টিনে আসে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। নৌকায় থাকা মিয়ানমারের ৩১ জন রোহিঙ্গা ও দুই সেনা-বিজিপি সদস্যকে দ্বীপের উত্তর সৈকতের একটি রিসোর্টে বিজিবির পাহারায় রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে থাকা সেনা ও বিজিপি সদস্যদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্রও ছিল।
রাখাইনের মংডুর বাসিন্দা আব্দুল আমিন জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে রাখাইনে জান্তা সমর্থিত বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষে মংডুর পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত ছিল। প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে হামলা করতে গিয়ে মংডুতে মর্টার শেল ও বোমার বিস্ফোরণে পঞ্চাশ জনের বেশি রোহিঙ্গাসহ সাধারণ লোক মারা গেছে। এভাবে রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মৃত্যু বাড়তে থাকলে জান্তার উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়বে এমন আশঙ্কাও করছেন তারা। তবে জান্তার কাছে শেষমেষ দুটি অপশন, হয় বিদ্রোহীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে, নয়তো মংডু ছাড়তে হবে।
তিনি আরও জানান, মংডুতে বেসামরিক লোক শূন্য করতে রোহিঙ্গাদের প্রথমে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে জান্তা। কিন্তু বাংলাাদেশ সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে সেটি ব্যর্থ হয়। তাই তারা এখন পরিকল্পনা করছে রোহিঙ্গাদের রাখাইনের রাজধানী সিত্তুয়েতে সরিয়ে রাখতে। শহরটি এখনো পুরোপুরি জান্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যেটুকু জেনেছি শুক্রবার ভোরে সাতটি বড় নৌকা নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক রোহিঙ্গা মংডু ছেড়ে গেছে। তারা সেন্টমার্টিনের বিপরীতে মিয়ানমারের জলসীমায় অবস্থান করা নৌবাহিনীর জাহাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাদের সঙ্গে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্য ছিল। ওই সাতটি নৌকার মধ্যে একটি নৌকা খারাপ আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনে ভিড়েছে।
এদিকে, মিয়ানমার রাখাইনে আরাকান আর্মি ও জান্তা সমর্থিত বাহিনীর মধ্যে সংঘাত এখনো অব্যাহত রয়েছে। তিনদিন সেখানে গোলাগুলি ও বোমা হামলা বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে টেকনাফ সীমান্তে আবারও মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দ শোনা গেছে। সবশেষ শুক্রবার সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফ পৌরসভা সীমান্তে রাখাইনের সংঘাতে গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।