ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর থেকে একদিন আগেই চলে আসছেন। চার দিনের সফর শেষ করে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার। তবে একদিন কমিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) রাতেই ঢাকার উদ্দেশে বেইজিং ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই সফরে কি এমন ঘটলো যার জন্য সূচিতে আচমকা এই পরিবর্তন করতে হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে জানান, একদিন আগে ফিরলেও নির্ধারিত সব কর্মসূচি শেষ করেই দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রেস সচিব জানান, ১০ জুলাই বেইজিং সময় রাত ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। ফেরার সময় এগিয়ে আনার কারণ হিসেবে নাইমুল ইসলাম খান বলেন, ‘সকালে আসলে একটা দিন চলে যায়, রাতে চলে আসলে দিনটা বেঁচে যায়।’
এই উত্তরের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, এতো গুরুত্বপূর্ণ সফরের শিডিউল তৈরির আগে তবে উনারা কি জানতেন না যে এভাবে রাত করে ফিরলে একদিন বেঁচে যাবে? তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হলো, উনি হয়তো সফরের সব কাজ একদিন আগেই শেষ করে ফেলছেন। কিন্তু সন্দেহ দানা বাঁধে কয়েক ঘণ্টা পরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের প্রেস ব্রিফিং শুনে।
নাইমুলের মতো হাছানও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব আনুষ্ঠানিক কাজ সেরেই ফিরছেন। তবে, একদিন আগে ফেরার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এটির কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বেইজিং সফরের কথা ছিল। অসুস্থতার কারণে তিনি বেইজিং আসতে পারেননি। আমরা যেদিন বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা করি, সেদিন সকালবেলা হঠাৎ করে সায়মা ওয়াজেদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তিনি আসতে পারেননি। তিনি এখনো অসুস্থ। কাজেই প্রধানমন্ত্রী সফর সংক্ষিপ্ত করেন, ওনার এখানে রাত যাপন করার কথা ছিল। এখন তিনি সেটা না করে মা হিসেবে অসুস্থ মেয়েকে সময় দেওয়ার জন্য চলে যাচ্ছেন।’
দুইজনের দুইরকম কথা শুনে সন্দেহ করাই স্বাভাবিক যে, ব্যাপারটাতে কোনো ধরনের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা আছে। চীন সফরের ঠিক আগে আগে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন এবং চীন সফরের প্রাক্কালে এক মন্ত্রী অযাচিতভাবে জানান, হাসিনার চীন সফরে ভারতের আপত্তি নেই।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোথায় সফরে যাবেন তার অনুমতি কি তবে ভারতের থেকে নিতে হবে? অবশ্য জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনের পর এইসব নিয়ে আর রাখঢাক নেই। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর আগেভাগে বেইজিং থেকে ফেরা আর এই নিয়ে প্রেস সচিব ও মন্ত্রীর দুই রকমের ব্যাখ্যা দারুণ সব আশঙ্কার জন্ম দেয়? চীন কি এমন কোন শর্ত দিয়েছে যা বাংলাদেশের পক্ষে মানা সম্ভব না? সেইসব শর্তে কি ভারতের অসম্মতি আছে?
বাংলাদেশের আর্থিক বিপর্যয় এখন যেই অবস্থায় আছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হলে তা কি আরও খারাপ হবে? এমনিতেই শিলিগুঁড়ি করিডোরের কারণে বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে চীন ও ভারতের যে কোন ধরনের যুদ্ধে ভীষণ ঝুঁকিতে থাকবে। কুটনৈতিকভাবে একদিকে হেলে গেলে বাংলাদেশ কি সেই ঝুঁকির পরিমাণ আরও অনেক বাড়িয়ে তুলবে না? ভারতের প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য কি দেশের সার্বভৌমত্ব একেবারে শেষ করে দেবে?
যেহেতু এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না। আর জনগণের কাছে তাদের স্বচ্ছতাও নেই। ফলে, পর্দার অন্তরালে যাই ঘটুক, কূটনীতি নিয়ে সন্দেহ আর আশঙ্কা বাড়তেই থাকবে। গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশ আরো ঝুঁকিতে পড়বে।