ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথমে ভারত এবং তার পর পরই চীনে দ্বিপক্ষীয় সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতির চলমান দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ সরকার তার প্রধান দুই রাজনৈতিক সমর্থক দেশ ভারত ও চীন থেকে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা আশা করেছিল। কিন্তু অর্জিত হয়েছে খুবই কম। কেবল চীন থেকে এসেছে কেবল ১ বিলিয়ন আরএনবি বা ইউয়ান (১ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা) সহায়তার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু শুধু চীন থেকেই ২০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার ঘোষণার প্রত্যাশা করেছিল সরকার।
সরকার ঘনিষ্ঠরা জানান, চীন থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বাণিজ্য সহায়তা আশা করা হয়েছিল। সঙ্গে বাজেট সহায়তা ও মেট্রোরেল, ভাঙ্গা-বরিশাল রেললাইনসহ কয়েকটি বড় প্রকল্পে অর্থায়ন মিলিয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা আশা করেছিল বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থ সহায়তা পাওয়ার বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হলেও কার্যত তেমন কোনো অর্জন হয়নি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, তিস্তাসহ কৌশলগত কিছু কারণে এমনটা ঘটতে পারে। দুই পক্ষ হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্জন হয়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বণিক বার্তা জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চীন ও ভারত থেকে নতুন অর্থায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও দেশ দুটি থেকে নতুন কোনো অর্থায়নের খবর পাওয়া যায়নি। সে অনুযায়ী, গত এক বছরে চীন ও ভারত থেকে নতুন কোনো অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, চীন ও ভারতের কাছে অর্থনৈতিক কিংবা প্রকল্প ও ঋণ সহায়তার আশা পূরণ হয়নি। কেন এমনটা হয়েছে তা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সেভাবে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা উচিত।
বাংলাদেশের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক আগে থেকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছে চীন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকেও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। ভারত প্রকল্পটির দায়িত্ব পেতে পারে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এমন ইঙ্গিত আসে। চীন হয়তো এ কারণেই বাংলাদেশকে বড় ধরনের অর্থ সহায়তা দেয়া থেকে পিছিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘চীন যা দেবে তা ১৫ কোটি ডলারেরও সমান হবে না, যা হতাশ হওয়ার মতো চিত্র। তিস্তা প্রকল্পে চীন আর নেই এটা বেইজিং সফরের আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। চীন হয়তো এ কারণেই অর্থায়ন থেকে পিছিয়ে গেছে। চীন যদি মনে করে বাংলাদেশকে চাপে রাখলে লাভ হবে, তাহলে তারা তা-ই করবে।
চীনপন্থী রাজনীতিবিদ ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, তিস্তা প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করলে টাকার অভাব হতো না। ভারত এত টাকা দিতে পারবে? ভারতকে খুশি করতে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হলো।
সূত্র : বণিক বার্তা