ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। সোমবার বেলা ৩টার দিকে বিজয় একাত্তর হলসহ কয়েকটি হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলার পর কয়েক হাজার বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ, ঢাবির পার্শ্ববর্তী লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীর চর, পল্টন, শাহবাগ এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক, অছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল সহকারে দোয়েলে চত্বর ও শাহবাগ মোড় হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। এসময় তাদের হাতে হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, জিআই পাইপ, লাঠি দেখা যায়।
এসব বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় দুটি প্রবেশ পথেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের সামনে দিয়ে তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। বিকেল চারটা পর্যন্ত এসব প্রবেশ পথ দিয়ে কয়েক হাজার বহিরাগতের সমাবেশ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
তারা সম্মিলিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে অবস্থানের পর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসে। এসময় মিছিলি থেকে রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উদ্দেশে ইট ছুঁড়ে মারলে ছাত্রীরা দুই তলা থেকে তাদের জুতা প্রদর্শন করে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে মিছিল যখন রোকেয়া হলের মূল গেট অতিক্রম করে তখন হল গেটে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন ছাত্রী ‘আদু ভাই, টোকাই, বলে দুয়ো তোলে। সে সময় তাদের উদ্দেশ্য করে ইট ছুঁড়ে মারা হয় ওই মিছিল থেকে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ হলের পকেট গেটে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় ছাত্রীরা। এসময় হলের ভেতর বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে গেট ও থালা-বাটি পিটিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
এদিকে বিকেল পাঁচটার পরও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসের কয়েকটি হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে সকাল থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভন্ডুল করতে পরিকল্পনা করে ছাত্রলীগ। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশের অপেক্ষা করছেন বলে উল্লেখ করেন।
এর মধ্যে চৌধুরী আনম নকিব আশরাফ নামের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা তার ফেসবুক পেজে লেখেন ‘গ্রাম থেকে এসে ফকিরের বাচ্চারা সীমা অতিক্রম করছে। শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলে স্মরণকালের সর্বোচ্চ ক্ষমতাটা দেখাতে চাই। ৭১-এ ছাত্রলীগ অস্ত্র হাতে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে।এবার অস্ত্র হাতে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজাকারের বাচ্চা মুক্ত করার নির্দেশ চাই।আমরা অস্ত্র হাতে নেওয়া অনুমতি চাই’।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা নকিব আশরাফ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরও নেতা। তার তবে আইডি থেকে এ ধরনের অসংখ্য পোস্ট দেওয়া হয়েছে। যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিকেল ৫টা নাগাদ তার আইডিটি সার্চ দিলে আইডিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো হিসেবে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, তারা (কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা) যখন হলে হামলা চালিয়েছে তখন ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে এসে এই অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমরা খুবই অবাক হয়েছি আশপাশের এলাকা থেকেও মানুষজন এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, দলীয় কর্মীদের জন্য রাস্তায় নেমেছি, বিষয়টি এমন নয়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনার অংশ হিসেবে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তারা ছদ্মবেশে মেয়েদের ওপর হামলা করে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় এ ধরনের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।