ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রবিবার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ যেই তাণ্ডবলীলা চালালো তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক লজ্জাজনক অধ্যায়ের জন্ম দিলো। এই সংগঠনটি এমনিতেই খুনি, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের কুকর্মের ইতিহাস লিখেছে। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে তাঁর হলেই পিটিয়ে হত্যা, ছাত্রদের আন্দোলনে হাতুড়িপেটা করা, হেলমেট নিয়ে সন্ত্রাস করাসহ গোটা শিক্ষাঙ্গনকে ত্রাস বানিয়ে রেখেছে এই সংগঠন। জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ভূমিকা রাখাই এখন এদের মূল কাজ।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে যখন গোটা দেশের তরুণরা বিক্ষুব্ধ তখন তাঁদের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গ করে কথা বললেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সেই অতি পুরোনো, বহু ব্যবহৃত রাজাকার কার্ড বের করে আনলেন। যাকেই নিজেদের বিরোধী ভাবা তাকেই রাজাকার ট্যাগ দেওয়ার কাজটা আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরেই করছে। এই ট্যাগের রাজনীতির আড়ালে চলছে অবাধ লুটপাট, দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস।
আওয়ামী লীগের এই কৌশল জিয়নবাদীদের মতো। দখলদার ইসরায়েল যেমন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেও উলটা এর প্রতিবাদকারীদের ‘এন্টি সেমিটিক’ বলে আখ্যা দেয়। পশ্চিমা মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের দিয়ে এই কথা বলায়। আওয়ামী লীগও তেমনিভাবে নিজেদের দুর্নীতি আর অপশাসনের বিরুদ্ধে আলাপ করলেও রাজাকার তকমা দিয়ে দেয়।
তবে, আশার ব্যাপার হচ্ছে গোটা দুনিয়ায় যেমন এখন বেশিরভাগ মানুষ ইসরায়েলের এই অপকৌশলে বিভ্রান্ত হচ্ছে না, বাংলাদেশের মানুষও তাই। অবশ্য, ফিলিস্তিনে যেমন গণহত্যা চলছেই, বাংলাদেশেও তেমনিভাবে চলছে তাণ্ডব। পুলিশ, আইন, দলীয় গুন্ডাদের দিয়ে নৃশংসভাবে দমনপীড়ন চলছেই।
ইতিহাস থেকে যদি শিক্ষা নিতে হয়, বাংলাদেশের মানুষকে এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মারের বিরুদ্ধে পালটা মার না দিলে অত্যাচার কখনো থামে না। অত্যাচারীদের পালটা আঘাত না করলে অত্যাচার চলবেই। কেবলমাত্র নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন দিয়ে নির্মম স্বৈরাচারকে রোখা যায় না।
দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের জনগণের সামনে এইরকম কোনো আহ্বান নাই। সর্বস্ব নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর উদ্যোম নিয়ে কোনো নেতা বা দল এগিয়ে আসছে না। ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষ পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে। নানাসময় নানা ইস্যু ধরে যারাই প্রতিবাদী হচ্ছে তাঁদেরই দমন করা হচ্ছে। আর কতোকাল পড়ে পড়ে মার খাবে এদেশের মানুষ?