ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সারাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। আর ঢাকা কলেজের সামনে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিরোধ করতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। তিনি জানান, তিনজনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের মধ্যে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে এক যুবককে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত দুজনকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। চিকিৎসক অপরজনকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার মৃত ঘোষণা করেন।
রংপুর:
পুলিশের গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। এসময় সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়েছেন। আবু সাঈদ বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এ বছর স্নাতক সম্পন্ন করেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন ড. তুহিন ওয়াদুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি লাশের পাশে ছিলেন।
আবু সাইদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তার সহপাঠীরা বলেন, আবু সাইদ কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিল। সে আজ সামনে থেকে লিড দিচ্ছিল। পুলিশের ছোড়া টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট এবং ইট পাটকেল ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয় আবু সাইদ। পরে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। অনেক পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছেন। একজন মারা গেছে বলে শুনেছি। তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা বলতে পারছি না।
রংপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, নিহত শিক্ষার্থী কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ছিলেন।
ঢাকা:
ঢাকা কলেজের সামনে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা কলেজের কাছে পেট্রোল পাম্প এলাকায় এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পদচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া।
এদিকে সন্ধ্যার পর সাইন্সল্যাব এলাকার সিটি কলেজের পাশে আরেকজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পপুলার হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের বয়স ২৫ বছরের কাছাকাছি। তার নাম মনির জানা গেছে।