ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। তিনিও যথাসাধ্য চেষ্টা করেন প্রশ্নের উত্তর দিতে।
স্থানীয় সময় বুধবারও (২৪ জুলাই) ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন অবশ্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক সাংবাদিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার পর ৯ জঙ্গি নেতা পালানোর বিষয়ে প্রশ্ন করেন। কৌশল করে মিলার যেভাব অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর দেন ওই প্রশ্নেরও উত্তর সেভাবে দেন। কিন্তু তাতে উত্তর যেন মনঃপূত হয়নি প্রশ্নকর্তার। তিনি বার কয়েক চেষ্টা করেন জঙ্গি ইস্যুতে মিলারের মন্তব্য পেতে। অবশেষে না পেরে মিলার বলেই দেন, এই ব্যাপারে তার নির্দিষ্ট করে কোনো মন্তব্য নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরে জানা যায় ওই সাংবাদিকের নাম গোলাম দস্তগীর জাহাঙ্গীর। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি।
তিনি বুধবার ভূমিকাসহ বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রথমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি হলো :
প্রশ্ন : আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে গত সাত দিন এখানে আমরা আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ এক সময় জেএমবি, হরকাতুল জিহাদের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করে এবং তা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আমি বলেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি কার্যক্রমে ইনস্টিটিউটসহ ব্যাপক মাত্রায় সরকার এবং জনগণের গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি ধ্বংস করেছে। এবং বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতের পরিকল্পনা থেকে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি উদ্বেগের বিষয়—এমনকি ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলের জন্যও এটি উদ্বেগজনক যে, তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে আক্রমণ করেছে এবং তাদের জঙ্গি সংগঠনের ৯ জঙ্গি নেতাকে ছেড়ে দিয়েছে যারা বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রমের থিংক ট্যাংঙ্ক এবং মূল চিন্তক।
সাম্প্রতিক সহিংস কার্যক্রমের কথা মাথায় রেখে, যেখানে জঙ্গিরা এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে—এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কি মনে করে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বাড়িয়ে তুলবে? এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং এই সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র আবারও কীভাবে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার পরিকল্পনা করছে?
উত্তরে মিলার বলেন, সুতরাং আমাকে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে দিন, কারণ গত কয়েকদিন ধরে আমরা এটি বলেছি: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের সহিংস কর্মকাণ্ডের আমার নিন্দা জানাই। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকারীদের ওপর করা সহিংসতার আমরা নিন্দা জানাই এবং আন্দোলনকারীদের কোনো পক্ষের সহিংসতারও আমরা নিন্দা জানাই, যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সহিংসতার অজুহাতে পরিণত করেছে। সব ক্ষেত্রেই সহিংসতার আমরা নিন্দা জানাই।
মিলার এইটুকু বলার পর গোলাম দস্তগীর সংক্ষিপ্ত করে বলেন, অবশ্যই।
এরপর মিলার আবারও বলতে থাকেন, আমরা চাই সারা বিশ্বের মানুষ যেভাবে তাদের স্বাধীনতার চর্চার সুযোগ পায় তেমনিভাবে বাংলাদেশের মানুষও তাদের মৌলিক স্বাধীনতার চর্চার সুযোগ পাক— তারা তাদের মৌলিক স্বাধীনতা চর্চায় সক্ষম হোক। তাই আমরা চাই— আমরা আন্দোলনকারী, সাধারণ নাগরিক এবং সরকার, সবাইকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
এবার গোলাম দস্তগীর নির্দিষ্ট করে বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনের অভিযুক্ত ৯ নেতার ছাড় পাওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য? কারণ এগুলো নয়—’
তখন মিলার জানান, তার কোনো মন্তব্য নেই। এই উত্তরের পরও যেন প্রশ্নকারী গোলাম দস্তগীর ক্ষান্ত হতে পারেননি। তিনি আবারও প্রশ্ন করেন, এমনটা সাধারণত হয় না—
এবার আরও স্পষ্ট করে উত্তর দেন মিলার। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমার র্নিদিষ্ট কোনো মন্তব্য নেই।
অবশেষে ক্ষান্ত হন সময় টেলিভিশনের এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, ঠিক আছে। ধন্যবাদ।