ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতা- আন্দোলনে মুক্ত পরিবেশে এই সরকার (অন্তবর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই প্রথম আমাদের সঙ্গে আজকে তারা বসেছেন। আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কি কি করা যায় এ বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন কি কি করেছে, কি কি করতে যাচ্ছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন আমরা মনে করি, এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মহলটি যারা বাংলাদেশের অধিকার হরণ করে নিয়েছিল, তারা আবার বাইরে থেকে বিদেশ থেকে… এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশের যে বিজয় অর্জন হয়েছে জনগনের সেই বিজয়কে নস্যা করার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছি যে, এখানে তথাকথিত মাইনোরিটির ওপরে নির্যাতনের যে একটা গল্প ফাঁদা হয়েছে সেই গল্পটা পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যমূলক, বাংলাদেশকে ম্লান করা, সরকারকে ম্লান করা, ছাত্র্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেওয়ার আরেকটি চক্রান্ত।’
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনায়’ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বৈঠক শুরু হয়।
এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বৈঠকে ‘যমুনা’ থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে নির্বাচন নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি আপনারা জানেন যে, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। তাদেরকে সেই সময়টি আমরা অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের(অন্তর্বতীকালীন সরকারের) সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।’
‘আমরা একটা কথা খুব পরিস্কার করে বলেছি যে, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এবং জনগণ ঠিক পূর্বের মতোই সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অক্ষুন্ন রেখে, তাদের নিরাপত্তাকে অক্ষুন্ন রেখে তারা যেন সরকারকে সহায়তা করে এবং আমরাও পুরোপুরিভাবে তাদেরকে সেইভাবে সহায়তা করছি।’
‘দেশের স্বার্থ বিরোধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এতো হত্যা, এতো নির্যাতন, এতো নিপীড়ন, এতোগুলো ছাত্রদের হত্যা করার পরও সেই দলটি(আওয়ামী লীগ) আবারও তারা বিভিন্নরকমভাবে কথা বলছে, যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি সরকারের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
‘আমরা মনে করি, সরকারের অবশ্যই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু হত্যাকারীর সঙ্গে যারা ছাত্রদের হত্যা করেছে, যারা শিশুদের হত্যা করেছে, যারা রাজনৈতিক নেতাদেরকে হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে এবং এই ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে গেলে আমরা সরকারকে অবশ্যই সমর্থন দেবো।’
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।