DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

স্যার, একটারে গুলি করি বাকিগুলি আগায়ে আসে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী বাংলা সাহিত্যর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে কবর নাটকটির জন্য। সে নাটকে দেখানো হয়, পাকিস্তানি শাসকদের গুলিতে যেসব মুক্তিকামী ছাত্ররা মারা গিয়েছিলো, তারা বারবার কবর ছেড়ে উঠে আসতে চায়। এতে বিচলিত হয় খুনী শাসকরা।

ইংরেজিতে বলে ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান দ্য ফিকশন। বাংলাদেশের মানুষ আরো একটা সংগ্রাম করে স্বৈরাচারমুক্ত হলো। দীর্ঘদিনের অপশাসন করা হাসিনাশাহীর পতন হলো জনগণের এক রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে, যেখানে হাসিনার পোষা পুলিশ অকাতরে খুন করেছে নিরস্ত্র জনতাকে। আর কবর নাটকের চেয়ে বীভৎস দৃশ্যকল্পের জন্ম হয়েছে।

এক ভিডিওতে দেখা যায়, হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে এক পুলিশ কর্মকর্তা মোবাইলে এক ভিডিও দেখিয়ে বলছেন, ‘স্যার, গুলি করি। মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার। বাকিডি (বাকিগুলো) সরে না। আগায়ে আসে। এইটা হইলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের’। মানুষ মারা ঐ পুলিশের মুখে কোনো অনুতাপ নেই, বরং প্রভুভক্ত কুকুরের মতো মালিকের গদি নিশ্চিত করতে না পারার খেদ। একইরকম অবস্থা মন্ত্রীরও। মানুষের জীবন এদের কাছে তুচ্ছ তা এই ভিডিওতে বোঝা যায়।

অবশ্য, এই ভিডিও দেখার অনেক আগেই থেকেই গোটা জাতি জানতো এই রক্তপিপাসু স্বৈরাচারী শাসনের কথা। মানুষ মারাটা এই মৃত্যু উপত্যাকায় হয়ে উঠেছিলো অতি স্বাভাবিক ঘটনা। র‍্যাব আর পুলিশ পরিণত হয়েছিলো কন্ট্রাক্ট কিলার বাহিনীতে। রাজনৈতিক বা স্বার্থের বিরোধিতা হলেও মৃত্যু লেখা হয়ে যেতো এই জনপদে।

শিশু ত্বকীর হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে হাসিনা। ক্রসফায়ার আর গুমের হাত থেকে রক্ষা পায়নি নিজের দলের লোকেরা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিলো গুম। কতো কতো মানুষ হারিয়ে গেছে তার হিসাব রাখাও কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। গুম হয়ে যাওয়া মানূষের পরিবাররা জানতেনও না তাদের প্রিয়জন বেঁচে আছে নাকি নেই। এমনকি ব্যাংক থেকে টাকা তোলা বা ইন্স্যুরেন্সের দাবি করতে না পারায় কতো পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। পিতাহারা শিশুদের কান্নায় গোটা জাতি ডুকরে আর্তনাদ করেছে, অভিশাপ দিয়েছে।

হাসিনাশাহীর আমলেই আমরা দেখতে পাই আয়নাঘরের মতো নির্মম টর্চার সেল, যার সংগে কেবল কুখ্যাত গুয়ানতানামো বের কারাগারের তুলনা চলে। নিজ দেশের মানুষকে কি নির্মম অত্যাচারই করেছে খুনীর দল।

আওয়ামী লীগ ভাবতো দেশটা তাদের, আর বাকিরা তাদের প্রজা। তাদের জীবনের দাম মূল্যহীন। দেশ স্বাধীন করার একক কৃতিত্বের একটা ফালতু অহংকারের উপর চেতনার ব্যবসা করে আদতে ওরা খুন করেছে।

কিন্তু, শেষতক দেশের মানুষ গুলির ভয়কে জয় করেছে। একজন মরে গেলেও বাকিরা এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ খুনে শাসকদের কিভাবে প্রতিরোধ করতে হয় তার এক অনবদ্য  রূপকথা লিখেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!