ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হাসিনা সরকারের পতনের জন্য পুলিশকেও দায়ী করা হচ্ছে। যেসব কর্মকর্তা কোনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে চেয়েছিলেন তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হচ্ছে বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের পর থেকে পুলিশের এসব কর্মকর্তারা নিজেদের একটি বিশেষ আদর্শের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। যার কারণে হাসিনা সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের পেশাদারিত্ব ধ্বংসের জন্য বিশেষ একটি এলাকা ও রাজনৈতিক আর্শীবাদপুষ্ট কর্মকর্তারাই দায়ী। এরা পুলিশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে বসে পুলিশকে রাজনৈতিক দমন নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পিআরবিসহ প্রচলিত যাবতীয় বিধি লঙ্ঘন করে তারা বিশেষ দলের হয়ে কাজ করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন অনেকে।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি উচ্চাভিলাসী ও অপেশাদার পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় অর্ধশতাধিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, ১৯৮৯ সালে নিয়োগ পাওয়া ৮ম ব্যাচের চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। সম্প্রতি তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দুই দফায় তিনি চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য ব্যবহারের সরাসরি অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। তালিকায় রয়েছে, ১৯৯১ সালে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস পুলিশ প্রশাসনের ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজি কামরুল আহসান, আতিকুল ইসলাম ও পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নাম।
১৯৯৫ সালে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস পুলিশ প্রশাসনের ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন এসবির সদ্য ওএসডি হওয়া এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি ওয়াইএম বেলালুর রহমান, শিল্প পুলিশের প্রধান মাহবুবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, সিআইডির সদস্য ওএসডি হওয়া প্রধান অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া, অতিরিক্ত আইজি দেব দাস ভট্টাচার্য্য, খন্দকার লুৎফুল কবীর, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মীর রেজাউল আলম।
১৯৯৮ সালে নিয়োগ পাওয়া ১৭ ব্যাচের ডিএমপির ওএসডি হওয়া কমিশনার হাবিবুর রহমান, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি অপারেশন আনোয়ার হোসেন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, রংপুর রেঞ্জের অব্যাহতি পাওয়া ডিআইজি আবুদল বাতেন, চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও সিআইডির শেখ নাজমুল আলম।
১৯৯৯ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. মাহবুবু আলম, রংপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার ও চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো. মনিরুজ্জামান, পুলিশ সদর দপ্তরের জয়দেব কুমার ভদ্র ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
২০০১ সালে নিয়োগ পাওয়া ২০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, শাহ মিজান শফিউর রহমান, মো. আনিসুর রহমান, মোল্যা নজরুল ইসলাম, এসএম মোস্তাক আহমেদ, জিহাদুল কবীর, মো. ইলিয়াস শরীফ, নূরে আলম মিনা, শাহ আবিদ হোসেন, মো. জামিল হাসান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের বিপ্লব বিজয় তালুকদার, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বহুল আলোচিত মো. হারুন অর রশীদ, এসবির মোহা. মনিরুজ্জামান, শ্যামল কুমার নাথ, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আলমগীর কবির, মো হামিদুল আলম, ড. শামসুন্নাহার, শেখ রফিকুল ইসলাম, ড. একেএম ইকবাল হোসেন ও মো. মাসরুকুর রহমান খালেদ।
২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২১তম ব্যাচের ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মো. মারুফ হোসেন সরদার, বিজয় বসাক ও সুব্রত কুমার হালদার, শ্যামল কুমার মুখার্জী, মো সাজ্জাদুর রহমান, প্রবীর কুমার রায়, আসম মাহতাব উদ্দিন, মোহা আহমারুজ্জামান, সুভাষ চন্দ্র সাহা, মো. মোকতার হোসেন ও পংকজ চন্দ্র রায়।
২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২২তম ব্যাচের ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নূরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, একই ব্যাচের মোহাম্মদ জায়েদুল ইসলাম ও সঞ্জিত কুমার রায়।
২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৪ ব্যাচের মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, ডিবি উপকমিশনান মশিউর রহমান (সদস্য সিএমপিতে বদলি), নাবিদ কামাল শৈবাল, মো. শহিদুল্লাহ, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।
২০০৬ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৫ ব্যাচের ঢাকার এসপি মো. আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, পাবনার এসপি মো. আব্দুল আহাদ, ডিএমপির মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। তবে ৫ আগস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এদের কয়েকজনকে চাকরি থেকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে।