ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য দেশে প্রধান প্রধান সংস্কার সম্পূর্ণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
এছাড়া সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। দেশে চলমান সংস্কার সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবেন। তাতে যা-ই হোক না কেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনী প্রধান এসব কথা বলেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে তার সক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়, যা মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রয়টার্স প্রকাশ করে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমি তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে, একটি সময়সীমার মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।
সংস্কারের পর দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ করা উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি ধৈর্য ধরার ওপর গুরুত্ব দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সুসম্পর্ক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি তবে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বললেন, তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। আমি এমন কিছু করব না যা আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।
সেনাপ্রধান জানান, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব সরকারি সংস্কারের সঙ্গে মিল রেখে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু সেনাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি কোনো কর্মরত সেনা সদস্য দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব। কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় কাজ করার সময় পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকতে পারেন।
দীর্ঘ মেয়াদে সেনাবাহিনী থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দূরে রাখতে চান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, এটি কেবল তখনই ঘটতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে। সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। এই মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীই নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই অন্তর্বর্তী সরকার একটি সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা সংশোধনের দিকে নজর দিতে পারে বলে মনে করেন সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া উচিত নয়।