ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোথায় যেন ঢিলে ঢালে ভাব; এইভাবে চলবে না। আপনাদের ভেতর থেকে যদি কেউ অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে চায়; আমি শুধু বলে রাখতে চাই- আমরা আন্দোলন থেকে চূড়ান্ত ইস্তফা দেইনি। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে কারো যদি অশুভ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমরা আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ আপনাদের শুনাব। যদি নিজেরা শুধরে না যান; যদি সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে রহস্য থাকে তাহলে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিরোধের ঝড়ের বাক্য শুনাব। তাই আপনারা অবিলম্বে সুষ্ঠভাবে সুষ্ঠু ধারায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণ সবার সমর্থনে সরকার। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয় তাহলে গণতন্ত্র ও জনগণ ব্যর্থ হবে। শেখ হাসিনার মতো কুলাঙ্গার যেন প্রত্যাবর্তন না হয়। এটাই জনগণ চেয়েছে। আজকের সরকারের মধ্যে কেউ কেউ একচোখা দৃষ্টিতে দেখে; বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। ১৬/১৭ বছর নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গুম খুনের শিকার হয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীর হাত পা পঙ্গুত্ব বরণ করে চোখ অন্ধ করে দিয়েছে শেখ হাসিনার পুলিশ; সেই দল বিএনপি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় উপদেষ্টা একচোখে দেখার চেষ্টা করছেন।
জনগণ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক কিন্তু সফলতার নামে সংস্কারের নামে যদি নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা কয় তাহলে মানুষ আপনাদের সন্দেহ করবে। কি এমন ঘটনা আছে নির্বাচনের তারিখ; সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করতে পাচ্ছেন না। অথচ গণতন্ত্রের একটি উপাদান অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, যা কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। গ্রামের পর গ্রাম পুলিশ মাইকিং করে ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয়নি। আর এখন জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে। যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর তারা তো ১৭ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনের তাদের লোকদিয়ে ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং এটা যদি তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যদি ঘোষণা না দেন, সময়ের কথা না বলেন তাহলে তো মানুষ ভিন্নভাবে দেখবে। জনগণের ইচ্ছায় সম্মতি তারা তাদের পছন্দের দলকে ভোট দিবে। এটা কেন পরিষ্কার করছেন না।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে তার বক্তব্যে ইচ্ছে করে ভাইরাল করে দেন। তিনি ভারতে আছেন। নিজেই লোক দিয়ে বক্তব্যে ভাইরাল করান। আর তার দলের নেতা ও তার পুলিশ প্রশাসনের কাউকে বিদেশে ঘুরতে, হাটকে দেখা যাচ্ছে। তারপরও যারা দেশে আছে তাদের হাতে তো বিএনপির নেতারাই খুন হচ্ছে। মূলত হত্যার নির্দেশ তিনি পালিয়ে যাওয়ার পরও দিচ্ছেন। গোপালগঞ্জে দিদার হত্যা, নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রকে হত্যা, এগুলো অশুভ ইঙ্গিত। শেখ হাসিনা আরেকটা ভয়ংকর পরিকল্পনা। এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকার যদি শেখ হাসিনার ময়লার বস্তা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান তাহলে কিন্তু কোনো সংস্কার করতে পারবেন না। কারণ এখনো শেখ হাসিনার ময়লার বস্তা পুলিশ প্রশাসন বহাল আছে।
তিনি বলেন, বাজারে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা সিন্ডিকেট করতেন আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে; কারণ তিনি চাইতেন শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেট যেন সব সময় ভারী থাকে। পকেট যেন খালি না হয়। তাই বাজারের পর বাজার মার্কেট আওয়ামী লোকেরা দখল করে রাখত। ঢাকা শহরে এমন কোনো বাজার নেই যে বাজারে সিন্ডিকেট করেনি আওয়ামী লীগের লোকজনেরা।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন তো তারা নেই- তাহলে মোটা চাল-মাঝারি চাল কেন কেজিতে ৩/৪ টাকা বেড়েছে। এখন কেন তেলের লিটারে ৬টা বেড়েছে, বয়লার মুরগি কেজিতে ১২ টাকা বেড়েছে, এটা তো জনগণ প্রত্যাশা করেনি। জনগণ চায় সিন্ডিকেটমুক্ত বাজার। তাই বাজার মনিটরিং তীব্রতর করা হোক।
গণমাধ্যমের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, কিছু মিডিয়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিকে একই পাল্লায় মাপার চেষ্টা করে। বিএনপির নামে কেউ কেউ দখলদারি, চাঁদাবাজি করতে পারে। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে ৫শতাধিক জনকে বহিষ্কার করেছি, তাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে। কই মিডিয়ায় তো এই কথা লেখা হয় না। তারেক রহমানের নির্দেশে দখলদারিত্বে যার নাম পাওয়া যাচ্ছে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটাই তো পার্থক্য।
অথচ নারায়ণগঞ্জে ত্বকীকে হত্যার পর সংসদ সদস্য হয়েছেন শামীম ওসমান। আর সংসদে শেখ হাসিনা বলেছেন শামীম ওসমান আমার পরিবোরের লোক। আমরা তোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা সামান্য অপরাধ করলে এমনকি কথাবার্তায় মানসিকভাবে আহত হয়েছেন তথ্য পেলেও ব্যবস্থা নিচ্ছি এই সংবাদ তো লেখা হয় না। আমরা যদি অসৌজন্যমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতাম শেখ হাসিনার শাসনামলে এতো গুম খুন করা হয়েছে, যারা তাদের আপনজনকে হারিয়ে গেছে আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হতে দেখছি এই ধরনের লেখা দেখতে পাই না। বরং নানা কায়দায় নানা ভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মহৎ উদ্যোগ নিয়ে মহানগর উত্তরের নেতৃবৃন্দ কর্মসূচি নিয়েছে। কর্মসূচির তাগিদ দিয়েছে গত ১৫ বছরের গণ ধিক্কৃত শাসক শেখ হাসিনা, ডিনি ক্ষশতায় থাকার জন্য শিশুর বুক থেকে রক্ত কেড়েছেন, কিশোরের বুক থেকে তরুণ রিক্সাচালকের বুক থেকে রক্ত কেড়েছেন। এবং দেশের বরেণ্য ব্যক্তি যারা এমপি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, কাউন্সিলর ছিলেন তাদেরকে গায়েব করে দিয়েছেন। ভয়ংকর এক দানব ষ্বৈরশাসক শেখ হাসিনার কবল থেকে মুক্তির জন্য যারা লড়াই করেছেন সেই লড়েইয়ে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার যোগ্যতম জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, গত জুলাই মাসের গণহত্যা আর আগস্টে আমাদের আন্দোলনের বিজয় এর পটভূমি রচনা করেছিলেন দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে তারেক রহমান। বিএনপির লাখো লাখো নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন তিনি এইবারই শেখ হাসিনার পতন হবে। কারণ আমাদের সন্তানেরা, ছোট ভাইয়ের রাস্তায় নেমেছে। দুরন্ত সাহস নিয়ে নেমেছে তাদের বুকে রক্ত ঝড়ছে তারপরও তারা তাদের বন্ধুকে পানি খাওয়াকে মুগ্ধর মতো ছুটে বেড়িয়েছে। রংপুরে আবু সাঈদ সাহস করে শেখ হাসিনার পুলিশের গুলি বুকে নিয়েছে; জীবন দিয়েছে। কত রক্ত কত আত্মদান কত শহীদি লাশ আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, এই লাশের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না। এই রক্ত লাশের বিনিময়ে আমরা গণতন্ত্রের পথের যাত্রার যে পরিবেশ আমরা কিনেছি। তাদের রক্ত দিয়েই এটা কিনা হয়েছে। আজকে যারা অন্তর্বর্তী সরকার উনি একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব উনার প্রতি প্রত্যেকে সমর্থন দিয়েছেন, তার নেতৃত্বে আস্থা রেখেছেন। কারণ এই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি যিনি দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন তাকে ১০ তলা বিল্ডিং এ লিফট বন্ধ রেখে হাঁটিয়ে তোলা হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার আগুন।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, শেখ হাসিনা যাকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করতেন তাকে ধ্বংস করার জন্য এমন কোনো চক্রান্ত নেই যা করেননি। তার চক্রান্তের প্রথম শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জরাজীর্ণ কারাগারে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বছরের পর বছর। তার চোখে অপারেশনে, হাঁটুতে অপারেশন, অনেক জটিল রোগ; তাঁকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল যাতে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যায়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল ফখরুদ্দিন-মঈনদ্দিন; তারা শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। এই নির্যাতনে আজও তিনি স্বাভাবিক হতে পারছেন না। এত কিছু নিয়ে আমরা ১৫/১৬ বছর পার করেছি। তাই বলতে চাই যাদের উপর আস্থা রেখে অতিক্রম করলাম তারা যেন কোনোভাবে তাদের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়। বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে জনকল্যাণের রাজনীতি, জিয়াউর রহমানের রাজনীতি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলম, সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।