DMCA.com Protection Status
title="৭

গুজব হতে সাবধান: পূজা নিয়ে গুজব ও একটি বিশ্লেষণ

পূজা এলেই গুজবে ডানা মেলে বিশেষত: আমাদের সুপ্রতিবেশী ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপী সরকার এবং ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো অনবরত Propaganda & Campaign 

নীচের ছবিটি দেখুন।

অতি সহজেই এই ছবি বা এধরনের ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া গরম করা কি অসম্ভব? 

কি ধরনের খবর ওরা প্রপাগাণ্ডা আকারে প্রকাশ করতে পারে এই ছবি নিয়ে, তা পাঠকগন হতে শুনতে ইচ্ছুক। দয়াকরে আপনার মতামত দিন।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি বড় পূজা মন্ডপে ৪/৫ জন দাঁড়িওয়ালা পান্জাবী পায়জামা পরিহিত মুসলমান ভাইয়েরা " হামদ ও নাথ " গান আকারে পূজা মন্ডপে পরিবেশন করে, যা বেশ ভাইরাল হয়। 

মনে পড়েছে ঘটনাটি? 

অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, মিডিয়াতে এটা নিয়ে যে হাইপ, গুজব বা অপপ্রচার হয়েছে – তা সত্য নয়।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, উক্ত পূজা আয়োজনকারীরা এদের নিমন্ত্রণ করে এবং হামদ ও নাথ গাইবার পর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের আপ্যায়ন করে। 

দু:খজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের মিডিয়া হাউসগুলো এসব অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম গ্রহণে পারদর্শী নয়। বাংলাদেশী মিডিয়াগুলো দলকানা ও জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্য নহে যতটা জনতা তাদের কাছে আশা করে। গত পরশু " দুর্গা পূজা, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা " শীর্ষক গাজী টিভির রাত ১১টার টক-শো'তে আমি জনগনের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া হাউসগুলোকে ভারতীয়/ইসরাইলী অপপ্রচার রোধ, ধর্মীয় উস্কানীমূলক বিভ্রান্তির ব্যাপারে সত্য অনুসন্ধানমূলক কাজ করতে অনুরোধ করি। 

আপনারা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে একমত?

আমাদের ভূলে গেলে চলবে না, ৩৬-শে জুলাই ছাত্র জনতা সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ / ২য় স্বাধীনতার পর বর্তমান ড: ইউনুস সরকার যার বয়স ২ মাস ২দিনের মাঝে ভারত একটি হাইপ তুলেছিল বাংলাদেশে আমাদের হিন্দু ভাই বোনেরা নিরাপদ নহে এবং তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালাচ্ছে। 

মনে আছে ঘটনাটি? 

এবার আপনারাই বলুন ঘটনাটি কি আদৌ সত্য? 

আলহামদুলিল্লাহ, জনসচেতনতার কারনে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, এই প্রোপাগাণ্ডা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এর পরপরই আমরা দেখলাম ভারতীয় বিএসএফ আমাদের দুই বাংলাদেশী হিন্দু ভাই বোনকে সীমান্তে গুলি করেছে। 

ভারতীয় সাধারণ জনগনের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক ছিল, আছে ও থাকবে। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিকভাবে আমাদের মধ্যে মিল আছে। 

কিন্তু রাজনীতিবিদরা দু-দেশের জনগনকে প্রতিপক্ষ বানায় যা সচেতন সকলেরই জানা ও বোঝা জরুরী।

এবার আসি একটু রাজনৈতিক প্রসঙ্গে:

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দাঙ্গা ও জাতিগত বিভক্তি যতটুকুই হয়েছে, মোটাদাগে তার দায়ভাগ আওয়ামী সরকারকে নিতে হবেই এবং সাথে ভারতীয় সরকারকেও নিতে হবে।

কারনটা খুব সোজা।

গত ৩টি নির্বাচন যেখানে জনগনের পার্টিসিপেশন ছিলোই না, তাকে ন্যাক্কারজনকভাবে ভারত সরকার সাহায্য করেছে। আন্তর্জাতিক নর্মস পরিহার করে সূজাতা সিং-কে দেখেছি কিভাবে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রয়াত জাতীয় পার্টির প্রধান এরশাদকে চাপ প্রয়োগ করতে।

এর মানে দাঁড়ায়, ভারতীয় সরকার বাংলাদেশের জনগনের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে থোরাই কেয়ার করে। বরং তারা তাদের আজ্ঞাবহ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে সকল রীতি নীতি বিসর্জন দিয়েছে। 

আওয়ামী শাসন আমলে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষে দুই ভাগে ভাগ করেছে।

আরে ভাই, আমরা যারা রাজনীতির সাথে জড়িত নই, কিন্তু রাজনৈতিক সচেতন, তারা ভিন্ন মত প্রকাশ করলে আমাদের জামাত-বিএনপি বানিয়ে ডিজিটাল আইনের আওতায় এনে জেলে পুরেছে। জনগনের বাকস্বাধীনতা এমনভাবে হরণ করেছে যে চরম ফ্যাসিস্টরাও লজ্জা পেয়েছে। 

তাই তো গত জুলাই বিপ্লবে ছাত্র ছাত্রীদের মিছিলে শ্লোগান উঠেছিল " আমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার -স্বৈরাচার। "

এই ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু স্বাধীনতার অনেক পরে জন্মেছে!!
আয়নাঘরের কথা তো আর বিশদভাবে বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না।

এটা কি?

এটা কি কোন সভ্য রাষ্ট্রের পরিচায়ক?

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনে বাংলাদেশ আজ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। 

বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল কারা করেছে ও করছে – তা চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে আপনাদের অনুরোধ করছি। উত্তরটা নিজেই পাবেন।

গুজব ও এর প্রভাব বোঝানোর জন্য আমার ক্ষুদ্র উদ্যোগ স্বার্থক হবে যদি আপনারা সচেতন হন।

চলুন আমরা সকল ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগন মিলে এক থেকে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি। শুধু মনে রাখবেন, এবার যে সূযোগ এসেছে – তা হারালে বাংলাদেশের অনেক অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

আমরা কি তা চাই?

মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস

কলামিস্ট, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!